আজও সেই পুরোনো বিদ্বেষ!

যুগান্তর সৌমিত্র দস্তিদার প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৩

জীবনে প্রথম ভয়াবহ দাঙ্গা দেখেছিলাম ১৯৬৪ সালে। থাকতাম এন্টালি এলাকায়। থাকতাম বলাটা হয়তো ঠিক হবে না, ও জায়গা ছিল আমার মামাবাড়ি। ছুটিছাটা বা বিপদে-আপদে আমাদের আশ্রয়। বাবা বাম ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ছিলেন। প্রায়ই তার ঠিকানা হতো জেল। আমি আর মা তখন বাক্সপ্যাটরা গুছিয়ে সোজা এন্টালি। এসব ব্যক্তিকথন সাধারণত করি না। করে ফেললাম রবীন্দ্র স্নেহধন্য সাহিত্যিক ও ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘খেলাঘর’ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মৈত্রেয়ী দেবীর অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ‘এক্সোডাস’ (মহানিষ্ক্রমণ) বইটি পড়ে। ছোট, পাতলা ১২৮ পাতার একচিলতে বই। অথচ এর পরতে পরতে এমন নানা বর্ণনা, মনে হচ্ছিল যেন ২০২৪-এর হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশ চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠছে। সেই হিন্দু-মুসলমান সংঘাত, শান্তি প্রচেষ্টা, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গুজব আর গুজব।


১৯৬৪ সালের দাঙ্গার সময় আমি নিতান্তই বালক। ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদ থেকে শুধু আগুনের লেলিহান শিখা দেখছি। আর শুনতে পাচ্ছি গগনবিদারী আর্তনাদ-বাঁচাও, বাঁচাও। কসমোপলিটন পাড়া। হিন্দুর সংখ্যা বেশি। তখনো জয় শ্রীরাম আসেনি। আওয়াজ উঠেছে-হর হর মহাদেব। দূর থেকে, সম্ভবত পার্ক সার্কাস, তপশিয়া থেকে মৃদু প্রত্যুত্তর আসছে-আল্লাহু আকবর। সে আওয়াজে জোর নেই। কেমন যেন অসহায়, করুণ হাহাকার। সামনের বাড়ির আমাদের খেলার সাথি নসমিন, আয়েশা, মকবুলদের ঘরে কখন কারা যেন আগুন লাগিয়েছে। আমি আর আমার থেকে ১০ মাসের বড় দিদি ভয়ে চিৎকার করে কাঁদছি। বড়রা জোর করে আমাদের নিচে নামিয়ে আনল। দিদির রাত থেকে ধুম জ্বর। জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় করছে নসমিনের নাম ধরে। ওরা পরস্পরের বেস্ট ফ্রেন্ড। সামনের বিল্ডিংয়ে কাজী নজরুল ইসলামের বাস। কবি তখন নির্বাক। অসহায়। একসময় যথারীতি দাঙ্গা থামল। কেন হলো, কারা বাধাল, আজও জানি না। আর তখন তো বোঝার বয়স হয়নি। ছোট্ট মসজিদের গায়ে ঝলসানো দাগ। কিছু দূরে ঘোড়ার আস্তাবলের বাইরে শীর্ণ, দুর্বল ঘোড়া ঘাস খাচ্ছে। পাশে একের পর এক কঙ্কালসার এক্কা গাড়ির ধ্বংসাবশেষ। রাস্তার ধারে ধারে পুলিশের সারি। ৬৪-র দাঙ্গা সারা জীবনের মতো দগদগে ক্ষত হয়ে থেকে গেছে। পরে, অনেক পরে জেনেছিলাম, ১৯৬৪ সালে কাশ্মীরের হজরতবাল মসজিদ থেকে মুসলমানদের মহানবির চুল চুরির খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভারত-পাকিস্তানের বিস্তৃত এলাকায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বরিশাল, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী সর্বত্রই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা শুরু হয়েছিল। বস্তুত ১৯৪৭-এর পর ১৯৫০ ও ১৯৬৪ সালেই হিন্দু এক্সোডাস ভয়ংকর চেহারা নিয়েছিল। সেই কলঙ্কিত অধ্যায় আজও তাড়া করে ফেরে উভয় সম্প্রদায়কে। আবেগ হারিয়ে দেয় যুক্তিকে। অজস্র গালগল্প কল্পনার পাখা মেলে আজও বিষিয়ে দিতে সক্রিয় হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক।


১৯৭১-এ জন্ম নিল স্বাধীন বাংলাদেশ। শেখ মুজিব ভারতীয় মিডিয়ার কল্যাণে হয়ে উঠলেন মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র মহানায়ক। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। পরবর্তীকালে শেখ হাসিনা এপারের বাসিন্দাদের কাছে হয়ে উঠলেন মৌলবাদবিরোধী আইকন। স্বাভাবিকভাবেই হাসিনা রেজিমের পতনের পর নতুন বাংলাদেশ চিহ্নিত হলো তালেবান, জঙ্গি, মৌলবাদের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে। পশ্চিমবঙ্গের লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের বড় অংশ আবেগতাড়িত হয়ে পড়শি দেশের প্রতি সংখ্যালঘু নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ আনতে লাগল। তা কতটা রাজনৈতিক, কতটা সাম্প্রদায়িক, কতটা স্রেফ গুজব, কেউ তলিয়েও দেখল না। আমাদের মতো কেউ কেউ যদি একবার-দুবার যুক্তি দিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণের চেষ্টা করল, তার কথা ফুৎকারে উড়িয়ে তাকেও চিহ্নিত করা হলো মৌলবাদের দোসর বলে। মৈত্রেয়ী দেবীর লেখা পড়ে আশ্বস্ত হচ্ছি, ১৯৬৪ সালে তিনিও একই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন। তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। কিন্তু সংবাদপত্রের উসকানির বিরাম ছিল না। খবরের কাগজের ভয়াবহ পরিবেশনার দৌলতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চিত্রিত হলো দুর্বৃত্তের, হিংস্র দাঙ্গাবাজদের ভূখণ্ড হিসাবে। যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে এই একুশ শতাব্দীতে আরও গাঢ় হয়েছে। মৈত্রেয়ী দেবী বুঝতে চেয়েছিলেন, একমাত্র দাঙ্গার কারণেই কি দলে দলে হিন্দু জনগোষ্ঠী এপারে চলে এসেছিলেন! মৈত্রেয়ী দেবী দণ্ডকারণ্যের বিস্তৃত অঞ্চলের শরণার্থী শিবিরে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন-বসত থেকে চলে আসার কারণগুলোর।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও