ইলিশ: পূর্ববঙ্গের ঐতিহ্য, পশ্চিমবঙ্গের নতুন পরিচয়

বিডি নিউজ ২৪ মুনতাসির মামুন প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২২:২৪

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলিশকে তাদের ‘রাজ্য মাছ’ হিসেবে ঘোষণা করে– যা রাজ্যের খাদ্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই সিদ্ধান্তটি ইলিশকে বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তুলে ধরলেও এটি গভীরতর ঐতিহাসিক, জনমিতিক ও সাংস্কৃতিক জটিলতার মতো দিকগুলোকেও স্পষ্ট করে সামনে নিয়ে আসে। ইলিশকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মাছের (স্টেট ফিস) প্রতীকে ভূষিত করলেও এর মূল শিকড় ‘পূর্ববঙ্গে’ (বর্তমান বাংলাদেশে)। পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের গ্রহণযোগ্যতা মূলত পূর্ববঙ্গ থেকে যাওয়া একটি ‘সাংস্কৃতিক ঋণ’ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা ১৯৪৭ সালের বঙ্গ বিভাজনের সময় এবং পরে বিপুল সংখ্যক পূর্ববঙ্গীয় মানুষের ‘অভিবাসন’ দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে বলেও ধারণা করা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের ইলিশের প্রতি এই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মূলত একটি এমন ঐতিহ্যের স্বীকৃতি, যা সীমান্তের এপারে (পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বাংলাদেশে) উদ্ভূত হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে নয়।


অভিবাসন ও সাংস্কৃতিক প্রভাব


পশ্চিমবঙ্গে কেমন করে ইলিশ এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল তা বোঝার জন্য ১৯৪৭ সালের বঙ্গ বিভাজনের পরবর্তী জনসংখ্যাগত পরিবর্তনগুলোর দিকে নজর দেওয়া জরুরি। ঐতিহাসিকভাবে, পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশ ছিল ইলিশ সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা তো বটেই, ছোট বড় নদনদীগুলোর পানি ইলিশের প্রধান উৎস ছিল যুগ যুগ ধরে, যা ইলিশকে পূর্ববঙ্গের মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছে। পূর্ববঙ্গে ইলিশ শুধুমাত্র খাদ্য নয়, এটি একটি ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক’, যা গভীরভাবে অঞ্চলটির নদী, উৎসব ও পারিবারিক ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। ভাজা, সেদ্ধ, বা বাটা সরষের রান্না করা যেভাবেই হোক না কেন, ইলিশ হলো এমন একটি রন্ধনপ্রণালী যা মানুষ, প্রকৃতি এবং সমাজের সংযোগকে নিবিড়ভাবে উপস্থাপন করে।


বঙ্গ বিভাজনের সময় পূর্ববঙ্গীয় অধিবাসীরা পশ্চিমবঙ্গে এসে আশ্রয় নেয়, তারা শুধুমাত্র ইলিশের প্রতি তাদের ভালবাসা নয়, বরং তাদের সম্পূর্ণ খাদ্যসংস্কৃতি বা খাদ্যাভ্যাস নিয়ে যায়। এই শরণার্থীরা, যাদের ‘বাঙ্গাল’ বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঐতিহ্য স্থানীয় ‘ঘটি’ (স্থানীয় পশ্চিমবঙ্গীয়) সংস্কৃতির সঙ্গেও মিশে যেতে শুরু করে। এই সাংস্কৃতিক মিশ্রণের প্রক্রিয়ায়, পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, যদিও রাজ্যের নদীগুলো ঐতিহাসিকভাবে ইলিশের জন্য বড় উৎস ছিল না কোনোদিনও।


পূর্ববঙ্গীয় অভিবাসনের ঢেউ পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে নাটকীয়ভাবে পুনর্গঠন করেছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের ইলিশকে তাদের রাজ্য মাছ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মূলত একটি ‘সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতার’ প্রক্রিয়ার প্রতিফলন। পশ্চিমবঙ্গ ইলিশকে গর্বের সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে দাবি করলেও, এটি মূলত পূর্ববঙ্গের অর্থাৎ বাংলাদেশের ঐতিহ্য। ইলিশকে রাজ্য মাছ প্রতীকে সম্মানিত করার সিদ্ধান্তটি পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক নিজস্ব সংস্কৃতির চেয়ে ‘অভিবাসন এবং পূর্ববঙ্গীয় শরণার্থীদের সংহতকরণ তথা বাঙালি বিভাজন, (বাঙ্গাল-ঘটি) বিরোধ রোধে পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক পরিচয়ে কতটা প্রভাব ফেলেছে তারই একটি প্রতিফলন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও