
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের বরপুত্র পিটার হিগস
তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক পিটার হিগস ৮ এপ্রিল ২০২৪ সালে ৯৪ বছর বয়সে এডিনবরায় তাঁর নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি প্রায় ছয় দশক এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতা করেন। হিগস গাণিতিকভাবে দেখান, কোনো কণা একটি নতুন ধরনের ক্ষেত্রের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ভর অর্জন করে।
তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক পিটার হিগস ৮ এপ্রিল ২০২৪ সালে ৯৪ বছর বয়সে এডিনবরায় তাঁর নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি প্রায় ছয় দশক এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতা করেন। হিগস গাণিতিকভাবে দেখান, কোনো কণা একটি নতুন ধরনের ক্ষেত্রের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ভর অর্জন করে।
এই ক্ষেত্রই হিগস ক্ষেত্র এবং কণার নাম হিগস বোসন। ২০১২ সালে সার্নে হিগস বোসন আবিষ্কৃত হয়। ফলে ২০১৩ সালে পিটার হিগস ও ফ্রাঁসো ইংলার্ট পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
এই আবিষ্কারের পেছনের ইতিহাস একটু জানা যাক।
ছাত্রাবস্থায় হিগস বিজ্ঞান ও দর্শনের নানা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ১৯৫০ সালের মে মাসের কোনো এক বিকেল। লন্ডনের কিংস কলেজে ম্যাক্সওয়েল সোসাইটি আয়োজন করেছে এক বিজ্ঞান সভা। সোসাইটির সেই সময়ের নবীন সভাপতি ২০ বছরের যুবক পিটার হিগস।
সভায় হিগস প্রশ্ন তুললেন, একজন বিজ্ঞানী কি প্রকৃতির সূত্রকে সত্যিকার অর্থে জানতে পারেন?
বিজ্ঞান হচ্ছে বাস্তবতার সূত্র অনুসন্ধান করার একটি পদ্ধতি এবং এই অনুসন্ধানের জন্য বিজ্ঞানী পরীক্ষণপদ্ধতি ব্যবহার করেন। কিন্তু হিগসের প্রশ্ন, একজন বিজ্ঞানী কিভাবে নিশ্চিত হন যে তিনি যা পর্যবেক্ষণ করছেন, তা-ই সত্য। আমরা কি নিশ্চিত যে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো এই বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা দেয়? যদি আমরা বিশ্বাস করি যে হ্যাঁ, সঠিক কাজ করছে, তবে হিগসের মতে এটি বিশ্বাসের বিষয়, যুক্তির বিষয় নয়। হিগস বস্তুত বলতে চেয়েছেন যেহেতু বিষয়টি বিশ্বাসের, সেহেতু এটি বিজ্ঞান নয়। প্রকৃতির স্বভাব নিরূপণ করতে গিয়ে আমরা যে বাস্তবতাকে দেখি, তা কল্পনাপ্রসূত হতে পারে।
হিগসের এই যুক্তি সেদিনের সভায় বিতর্কের ঝড় তুলেছিল।
হিগসের এই জিজ্ঞাসা দার্শনিকদের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে দার্শনিক রেঁনে দেকার্ত দর্শনের দুটি সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। একটি হলো—আমরা কী জানতে পারি? এবং অন্যটি হলো—আমরা কিভাবে তা জানতে পারি? দেকার্ত তাঁর যুক্তি বিনির্মাণে কল্পনার সাহায্য নিয়েছিলেন এভাবে যে এক দৈত্য তাঁকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে কি জানা যাবে দৈত্য যা বলছে, তা প্রকৃত সত্য কি না। দেকার্ত চিন্তা করলেন দৈত্য কোন বিষয়টি তাকে বিশ্বাস করানোর মাধ্যমে বোকা বানাতে পারবে না। দেকার্ত তার উত্তর দিলেন এভাবে, ‘একটিমাত্র বিষয় আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে যদি আমি চিন্তা করি, তাহলেই আমার অস্তিত্ব আছে।’ দার্শনিক দেকার্তের ভাষায়, ‘cogito ergo sum’ বা ইংরেজিতে বলা যায়,
‘I think, therefore I am.’ দেকার্ত এ কথা বলেই থেমে যাননি। তিনি সমস্যাটি অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করেন। দেকার্ত উল্লেখ করেন, আমরা যদি কোনো সদাশয় ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের ইন্দ্রিয় পেয়ে থাকি, তাহলে এই ইন্দ্রিয় দ্বারা আমরা যে বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করব, তা সত্যি হবে। প্রশ্ন হলো, ঈশ্বর যদি সদাশয় না হন, যদি তিনি বোকা বানানোর চেষ্টা করেন, তাহলে আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতার পর্যবেক্ষণ সত্য না-ও হতে পারে। এভাবে পর্যবেক্ষণের উভয়সংকটের মধ্যে পিটার হিগস যেতে চাননি। তাই তিনি তাঁর অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানকে বেছে নেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পদার্থবিজ্ঞান
- নোবেল বিজয়ী