
পরিচয়ের রাজনীতি ও বাঙালি মুসলমান
গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডে একটা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে আরও ৪৩ জন হতভাগ্যের সঙ্গে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামের একজন তরুণীরও প্রাণহানি ঘটে। অভিশ্রুতি একটা অনলাইন নিউজ পোর্টালে রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেছেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি সেই ভবনে একটা রেস্টুরেন্টে তার এক বন্ধুর সঙ্গে খেতে গিয়ে দুর্ভাগ্যবশত অকালে মৃত্যুমুখে পতিত হন।
নামের শেষে শাস্ত্রী আছে, এমন বিখ্যাত দুজন ব্যক্তির একজন হলেন পড়াশোনার পরিমণ্ডলে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আর খেলাধুলার জগতে ক্রিকেটার রবি শাস্ত্রী। তাদের দুজনই হিন্দু। অভিশ্রুতি নামটাও হিন্দুদের মধ্যেই প্রচলিত। অকালপ্রয়াত অভিশ্রুতি তার ফেসবুক প্রোফাইলে বেশকিছু ছবি পোস্ট করেছিলেন; যেখানে দেখা গেছে, তিনি রমনার কালীমন্দিরে পূজা করতেন। উপরন্তু সেই কালীমন্দরের পরিচালক মৃত অভিশ্রুতিকে হিন্দু দাবি করে তার মৃতদেহের হিন্দু নিয়মে সৎকার করার লিখিত দাবি জানিয়েছিলেন পুলিশের কাছে। তার দাবি অনুযায়ী, অভিশ্রুতির জন্ম উত্তর ভারতে। জন্মের পর তাকে কুষ্টিয়ার এক মুসলমান দম্পতি পালন করে। কিন্তু গোল বাঁধে, সবুজ শেখ নামের একজন পুলিশের কাছে অভিশ্রুতিকে নিজের কন্যা হিসাবে দাবি করে লাশের দাফনের অনুমতি চাইতে গেলে। প্রথমে সম্ভাব্য প্রতারক মনে করে পুলিশ সবুজ শেখকে আটক করে রাখে। এরপর প্রতারণার জোরালো প্রমাণের অভাবে তাকে ছেড়ে দেয়। পত্রিকা ও টিভিতে অভিশ্রুতির মায়ের বিলাপ আর মৃত কন্যার লাশের জন্য আকুল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তার প্রকৃত পরিচয় নির্ণয় করার জন্য ডিএনএ টেস্টের সিদ্ধান্ত নেয়। এগারো দিনের মাথায় ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট নিশ্চিত করে, অভিশ্রুতি আসলেই সবুজ শেখের কন্যা বৃষ্টি খাতুন। পুলিশ তার লাশ জন্মদাতা পিতা-মাতার কাছে হস্তান্তর করে। তারা লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে মুসলমান প্রথামতো দাফন ও কবরস্থ করার ব্যবস্থা করে। মহান আল্লাহর কাছে তার রুহের মাগফিরাত ও নাজাতের জন্য দোয়া করি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনীতি
- সাম্প্রতিক রাজনীতি
- রাজনীতিবিদ