নির্বাচনের পথে: জনগণের ম্যান্ডেট ও কল্যাণ রাষ্ট্রের অভিমুখ

প্রথম আলো রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৬:৩১

বাংলাদেশ আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান একটি অলিগার্কিক শাসনের পতন ঘটিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের গভীর কাঠামোগত সংকটগুলোকেও উন্মোচিত করেছে। ছয়টি বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে মতামত জমা দিয়েছে। রাজনৈতিক সংলাপ বা সংস্কারপ্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দল ও অংশীজনদের মধ্যে একমত এবং ভিন্নমত থাকাটাই স্বাভাবিক। এই ভিন্নমতগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করেই একটি সর্বসম্মত ন্যূনতম সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়ন করা সম্ভব। 


অলিগার্কিক শাসনব্যবস্থা দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো জনগণের ম্যান্ডেট। জনগণই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তাদের আস্থা ও সমর্থন ছাড়া কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না।


জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিকভাবেও অপরিহার্য। নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক সংহতি এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অর্জন সম্ভব। একটি বৈধ ও জনসমর্থিত নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো দেশই স্থবিরতা, প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় এবং ক্রমবর্ধমান জন-অসন্তোষের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হতে পারে না।


জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়ার আগে একটি সর্বসম্মত সংস্কার এজেন্ডা প্রণয়নও জরুরি। এর জন্য বিভিন্ন পক্ষের সমঝোতা দরকার। সমঝোতা মানে হলো মতপার্থক্য বা বিরোধ মেটানোর জন্য বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া। এখানেই ‘ছাড়’ ও ‘সমাধান’-এর জন্য মাথা ও মনের সংমিশ্রণ দরকার। রুটিন কাজের বাইরে বর্তমান প্রশাসনের প্রধান কাজ সঠিক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়ার জন্য একটি বাধ্যতামূলক অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর। এতে নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা রোধ সম্ভব। 


নির্বাচনের আগে মোটাদাগে ন্যূনতম সংস্কার কর্মসূচির সমঝোতা লাগবে। প্রথমত, ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা, বায়োমেট্রিক ভোটার যাচাইকরণ এবং ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতি দরকার। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে একটি স্বচ্ছ ও বহুদলীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করা জরুরি।


দ্বিতীয়ত, প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামো গড়ে তুলতে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন।


তৃতীয়ত, একটি কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো বেশি দরকার। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণও প্রয়োজন। চতুর্থত, সংস্কারের মাধ্যমে বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার অভীষ্ট ফলাফল দিতে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। 



এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের জনগণের বাছবিচারে নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে যেসব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকতে পারে, সেগুলো নিয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক।


কল্যাণরাষ্ট্রের গোড়াপত্তন


কল্যাণরাষ্ট্রের গোড়াপত্তনই ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ধারণ করতে পারে। একটি কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের জন্য শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই যথেষ্ট নয়। সর্বজনীন নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নাগরিক রাষ্ট্রের মৌলিক শর্ত।


প্রথমত, শিক্ষা হতে হবে সর্বজনীন। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা তথা সব স্তরে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতি সময়ের দাবি। বিশেষ করে মেয়েদের এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং সাশ্রয়ী মূল্যে বিশেষায়িত চিকিৎসা নিশ্চিতি সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রথম ধাপ।


তৃতীয়ত, বাসস্থান মৌলিক অধিকার। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় সাশ্রয়ী মূল্যে সামাজিক আবাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। চতুর্থত, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষির আধুনিকায়ন এবং খাদ্য বিতরণব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজনীয়। পঞ্চমত, জীবনচক্রভিত্তিক সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তুলতে মাতৃ, শিশু, যুব বেকার এবং বয়স্ক ভাতা চালু করতে হবে। এই সামাজিক নিরাপত্তায় জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া জনগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই ভাতাসমূহ প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করে বৈষম্য কমাবে।


উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন ও বৈচিত্র্যকরণ


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে হলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ অপরিহার্য। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। নির্ভরশীলতা কমাতে শিল্প খাতের বহুমুখীকরণ ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি। এ ছাড়া কৃষি খাতকে আধুনিকায়ন করে খাদ্য উৎপাদন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে যথাযথ শ্রম আইন প্রণয়ন এবং তাদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি আশু কর্তব্য।


শিল্পায়নের মাধ্যমেই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। যুব বেকারত্ব কমাতে এবং জনমিতিক সুবিধা অর্জনে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এতে অভিবাসী আয় বৃদ্ধির নতুন দরজাও খুলে যাবে। সবারই জানা যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করতে হলে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে সহজ করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো লাগবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বহুগুণে বাড়াতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নে বিশেষ প্রণোদনা এবং ঋণসুবিধা প্রদান করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও