ধর্ষণের বিচার: বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা এবং নতুন আইনের চ্যালেঞ্জ

বিডি নিউজ ২৪ আমীন আল রশীদ প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩:৫৯

কয়েকটি প্রশ্ন সামনে রেখে এগোনো যাক।


১. হঠাৎ করে দেশে ধর্ষণ বেড়ে গেল কেন?


২. ধর্ষকের সংখ্যা বেড়ে গেছে নাকি এ সম্পর্কিত খবরের সংখ্যা বেড়েছে?


৩. প্রচলিত আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকার পরেও কেন এই ধরনের অপরাধ কমছে না?


৪. একটি আইন থাকার পরও সরকার কেন এটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে?


৫. সংশোধন করে আইনটি আরও কঠিন করা হলেই কি ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে?


প্রচলিত আইনে ধর্ষণের শাস্তি ও দায়মুক্তি


নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯ ধারায় বলা হয়েছে: যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাইলে তিনি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।


যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহলে ওই দলের প্রত্যেকে মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।


ধর্ষণের চেষ্টা করলে পাঁচ বছরের কম নয় এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।


পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলে যাদের হেফাজতে থাকাকালীন এই ঘটনা ঘটেছে, অর্থাৎ নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য অনধিক দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যূন দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।


প্রশ্ন হলো, একজন সাধারণ মানুষ ধর্ষণ করলে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, আর পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে দশ বছর কারাদণ্ড— এটা কী ধরনের আইন? এখানে কি পুলিশকে একরকম দায়মুক্তি দেয়া হলো? সংবিধান বলছে, আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান। কিন্তু ধর্ষণ আইন কেন পুলিশের জন্য শিথিল? পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় একজন নারী বা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হবেনই বা কী করে? এই ভাবনাটাই বা আইনপ্রণেতাদের মাথায় কী করে এল? একজন নারী বা মেয়ে পুলিশ হেফাজতে থাকা মানে তো তিনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। তিনি কীভাবে বা কেন ধর্ষণের শিকার হবেন? আর যদি তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কারও গাফিলতিতে কিংবা তাদের কারও দ্বারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে তার তো শাস্তি হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের যে শাস্তি, তারচেয়ে বেশি। সুতরাং এটি বিদ্যমান আইনের একটি বিরাট দুর্বলতা।



ধর্ষণ মানে কী?


প্রচলিত আইনে ধর্ষণের ব্যাখ্যা এরকম: যদি কোনো পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের বেশি বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে অথবা ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।


বাংলাদেশের বাস্তবতায় ১৬ বছর বয়সী একজন কিশোরীর যথেষ্ট বুদ্ধিবিবেচনা তৈরি হয়ে যায়। ওই বয়সে সে মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে যায়। সুতরাং কোনো পুরুষ যদি তার সম্মতি নিয়ে যৌন সম্পর্কে জড়ায়, তাহলে সেটি ধর্ষণ হবে কেন? সম্ভবত আইনে এই ধরনের শারীরিক সম্পর্ককেও ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যাতে ১৬ বছরের আগে কেউ কোনোভাবেই শারীরিক সম্পর্কে না জড়ায়, বিশেষ করে কোনো পুরুষ যাতে ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের সঙ্গে সুযোগ থাকলেও শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো থেকে বিরত থাকেন।


বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের বেশি বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে সেটি ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে। প্রশ্ন হলো, কোন সম্পর্কটি সম্মতিতে হয়েছে, আর কোনটি প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় বা ভয়-ভীতি দেখিয়ে করা হয়েছে— তা প্রমাণ হবে কী করে?


ধরা যাক, পারস্পরিক সম্মতিতে দুজন নারী-পুরুষ যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলেন এবং এরপর তাদের মধ্যে কোনো ইস্যু নিয়ে বিরোধ তৈরি হলো। তখন ওই নারী যদি এই অভিযোগে মামলা করেন যে, তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বা প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে— তাহলে সেটিও ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এরকম ঘটনা ঘটলে ওই পুরুষ ন্যায়বিচার পাবেন না। কেননা অভিযোগকারী কী করে প্রমাণ করবেন যে সম্মতি ছাড়াই তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে? আদালত কি অভিযোগকারীর অভিযোগকেই শুধু আমলে নেবেন? এখানে অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থন বা সুরক্ষার সুযোগ কোথায়? ফলে বিষয়টা খুব জটিল এবং এ কারণেই দেখা যায়, এই ধরনের ঘটনা বছরের পর বছর ধরে অনিষ্পন্ন হয়ে পড়ে থাকে।


২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরের একটি খবরের শিরোনাম ছিল: নারী নির্যাতন মামলার অধিকাংশই বানোয়াট। খবরে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে লক্ষাধিক মামলার বিচার কাজ চলছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা বলছেন, এসব মামলার অধিকাংশ মিথ্যা ও ভুয়া। মামলাগুলোর ৮০ শতাংশই যৌতুক, ধর্ষণ ও যৌননিপীড়নের অভিযোগে করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ নারী নির্যাতন হলেও অন্য ধরনের বিরোধের কারণেই এসব করা হয়েছে। বিচারকরা মামলাগুলো আপসে নিষ্পত্তির পরামর্শ দিচ্ছেন। পাশাপাশি মামলাগুলো সুপ্রিমকোর্টের লিগ্যাল এইডের কাছে পাঠানোর কথা বলেছেন।


নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলারও শাস্তির বিধান রয়েছে। যেমন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে: যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের জন্য এই আইনে মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন, তিনি অনধিক ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। কিন্তু ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলায় কতজনের শাস্তি হয়েছে বা কতগুলো মামলা হয়েছে, তাও বিরাট প্রশ্ন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও