
ড. ইউনূস না এলে ভারতীয় হস্তক্ষেপ হতে পারত: ড. দিলারা চৌধুরী
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণ ছিল বিপদের সময় মাথায় ছাতা ধরার মতো। ৫ আগস্টের (২০২৪) পর তিনি না এলে দেশে হয়তো ভারতীয় হস্তক্ষেপ হতো। অনেক বেশি রক্তপাত হতে পারত। অনেক মারামারি হতো বাংলাদেশে। পুরোদস্তুর একটা অস্থিতিশীল অবস্থায় চলে যেত দেশ। যুগান্তরের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এমনই অভিমত প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাসান সাইদুল
অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস অতিবাহিত হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. দিলারা চৌধুরী : শেখ হাসিনার আমলের চেয়ে এখন আমরা অনেক ভালো আছি। তবে প্রথমদিকে সরকারের ওপর যে রকম মানুষের অনেক আশা-ভরসা ছিল, বিশেষ করে একটা নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা করার ব্যাপারে সরকার অনেক পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করেছিল, সেটার ব্যাপারে সেরকম কোনো অগ্রগতি আমি দেখছি না। আপনারা জানেন, সবাই জানে-দেশের অবস্থা তেমন ভালো না। সরকারকে এটাকে দৃঢ়হস্তে মোকাবিলা করতে হবে। কেন সরকার এটা পারছে না, তার অনেক কারণ আছে। পুলিশ ইনঅ্যাক্টিভ। পতিত সরকারের লোকজন এখানে আছে না? তারা নানারকমের আন্দোলন ও ইস্যু নিয়ে রাস্তায় নামছে। সেজন্য দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি দেশে কিছুটা অরাজকতা চলেই। এমনটা সব দেশেই হয়েছে। সেই অরাজকতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শুধু যে সরকারকে শক্তিশালী হতে হবে তা না, অন্য যারা স্টেকহোল্ডার আছে, তাদেরও সাহায্য করতে হবে। সবচেয়ে বেশি আমি যেটা দেখি, সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে আছে, কিন্তু তাদের কোনো অ্যাকশন নেই। তারা যদি অ্যাক্টিভ হতো, তাহলে কিন্তু সিচুয়েশন এত খারাপ হতো না। পুলিশ ডিমোরালাইজড। পুলিশ সংগঠিত হতে পারছে না এখনো, এটা সরকারের ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি। সবচেয়ে বড় কথা, সাত মাস পর মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি হতাশা বেড়েছে। অথবা এ কথা ভেবে হতাশ হয়েছে যে, সরকারে যেসব উপদেষ্টা নেওয়া হয়েছে, তারা অযোগ্য। তাদের রাষ্ট্র চালানোর কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। তারা জানেও না রাষ্ট্র কীভাবে চলে। এটা রাজনীতিকরা পারে, এনজিওওয়ালারা পারে না। প্রথম থেকেই এমন উপদেষ্টাদের নেওয়া উচিত ছিল, যারা রাজনীতি বোঝেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশের রাজনীতি বোঝার মতো লোক, তাদের নেওয়া উচিত ছিল।
ড. ইউনূসের জায়গায় অন্য কেউ যদি থাকতেন, তাহলে কি প্রতিবিপ্লব হয়ে যেত বলে মনে করেন?
ড. দিলারা চৌধুরী : কথায় বলে না, বিপদের সময় মাথায় ছাতা ধরা? ৫ আগস্টের পর যদি তিনি না আসতেন, তাহলে দেশে হয়তো ভারতীয় হস্তক্ষেপ হতো। অনেক বেশি রক্তপাত হতো। পুরোদস্তুর একটা অস্থিতিশীল অবস্থায় চলে যেত দেশ। এখনো আমি মনে করি, তিনি একটা সিঁড়ির মতো কাজ করছেন পুরো বাংলাদেশে। এদেশে যারা রাজনীতি করেন-রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজ, মিডিয়া-সবারই এটা বোঝা উচিত যে তিনি একটা ঢালের মতো আমাদের আগলে রেখেছেন এবং এ ঢালের মধ্য থেকে আমাদের সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে। তিনি না থাকলে বাংলাদেশে অনেক অরাজকতা হতো এবং হবেও।
শেখ হাসিনা কয়েকদিন পরপর ‘লাইভে’ আসেন; কিন্তু তিনি চেহারা দেখান না। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ড. দিলারা চৌধুরী : আমি জানি না এসব সত্য কিনা। এসব তো নাকি এখন বানানো যায়। আমি জানি না সত্য-মিথ্যা। কিন্তু হাসিনা বার্তা তো দিচ্ছেন। বার্তা দেওয়ার মানে ভারত তাকে সমর্থন করছে। কারণ ভারতকে না জানিয়ে তো তিনি কিছু করছেন না। ভারত আমাদের অস্থিশীল করতে চায়। এটা আমরা সবাই জানি। এটা হাসিনাকে দিয়ে করানো হচ্ছে। তবে এটা ভারতের ভুল পলিসি বলে আমি মনে করি। কারণ, বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে ভারতের নিরাপত্তার জন্য তা হবে বিপজ্জনক।
বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা বলতে কী বোঝায়? গত ১৬ বছর কি দেশ স্থিতিশীল ছিল? ভারতের দৃষ্টিতে অস্থিতিশীল কোনটা?
ড. দিলারা চৌধুরী : ভারতের দৃষ্টিতে অস্থিতিশীলতার মানে হচ্ছে, তাদের পছন্দমতো সরকার না থাকা। শেখ হাসিনার মতো সরকার না থাকা। এমন একটা সরকার তারা চায়, যারা জনপ্রিয় কিন্তু তাদের হয়ে কাজ করবে। তবে একেবারেই হাসিনার মতো আর আনতে পারবে না। এটা ঠিক যে, যতক্ষণ তারা হাসিনার মতো, নিজের পছন্দমতো সরকার আনতে না পারবে, ততক্ষণ তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাবে।
ভারতের যে মিশন-ভিশন বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা, তা প্রতিরোধ করার সক্ষমতা কি বাংলাদেশের আছে?
ড. দিলারা চৌধুরী : সেনাবাহিনী এখানে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সেনাবাহিনী বিশাল গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিষ্ঠান। আমাদের অভ্যন্তরীণ নীতিতে তারা বিশাল ভূমিকা রাখে। এটা তাদের ছাড়া তো অসম্ভব বলে মনে করি। প্রশ্ন, আমরা পারব কি না? আমরা অবশ্যই পারব। কীভাবে? যদি আমরা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো এক হই এবং ভারতের বিষয়ে আমরা প্রায় সবাই এক। শ্রীলংকা তো ভারতের কথা শুনছে না। আমরা যদি তাদের আধিপত্য না মানি, তাদের কথা না শুনি, কী করবে? আমরা ভারতের শত্রু নই। আবার তাদের আধিপত্যও মানব না। প্রতিবেশী তো বদলানো যাবে না। আমাদের সঙ্গে সমান সমান সম্পর্ক। সম্মানের সম্পর্ক এবং আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা