-687eca5a640f4.png)
কেন শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার প্রয়োজন
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্থলপথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা থাকার পরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ দেশগুলো ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেরও অন্তর্ভুক্ত। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এ অঞ্চলের ভবিষ্যতে বিশ্ব নেতৃত্বে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দেশগুলো সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ তৈরি এবং তা ব্যবহার করতে পারলে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা ত্বরান্বিত হবে। আসিয়ান দেশগুলো সম্মিলিত ও স্বতন্ত্রভাবে তাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বজায় রেখেছে, কিন্তু দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি কার্যকর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্মের অভাব থাকায় তারা সেই সুযোগ-সুবিধা নিতে পারছে না। মিয়ানমার ছাড়া এ অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ নানা ধরনের উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও দেশগুলো দৃশ্যত শান্তিতেই ছিল। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এবং মিয়ানমারের চলমান সংঘাত শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর ভারত ৭ মে ‘দ্য অপারেশন সিঁদুরে’র মাধ্যমে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর পরপরই পাকিস্তান ভারতীয় সামরিক স্থাপনাগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসহ সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়। ১০ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। উভয় দেশ একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করায় সম্পর্কের অবনতি হয়। পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক না হওয়ায় এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে।
ভারত
ভারত মিয়ানমারের সঙ্গে সংযোগ, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্প এবং কালাদান মাল্টিমডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। ভারত আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা কালাদান প্রকল্পের নির্মাণ কার্যক্রম আবার শুরু করেছে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে এটি পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে বাণিজ্য সহজতর করার জন্য বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও ভারত উত্তর-পূর্ব ভারতকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্তকারী ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্প ও অন্য অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। ভারতের ঋণ সহায়তার আওতায় টেলিযোগাযোগ, রেলপথ, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও কৃষির সহায়তা প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি সিতওয়ে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
চীন
মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের দৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। চীন অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের পাশাপাশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের মাধ্যমে মিয়ানমারকে সমর্থন করে। রাখাইন রাজ্যে চীনের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে। রাখাইনে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চকপিউতে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের গুরুত্বপূর্ণ অংশ একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের অন্তর্ভুক্ত। চীন মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী, চীন মিয়ানমারে তার স্বার্থরক্ষার জন্য সরকার ও বিদ্রোহী উভয়ের সঙ্গেই আলোচনা করে। মিয়ানমার সরকার ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি সুরক্ষা পরিষেবা আইন জারি করে, যা চীনা বেসরকারি সুরক্ষা সংস্থাগুলোকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোসহ চীনের স্বার্থরক্ষার জন্য মিয়ানমারে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করার বিষয়ে অনুমতি দেয়। চীন তার সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্রাদারহুড জোটের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। চীন ও ভারত উভয়েরই মিয়ানমারে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। উভয় দেশই সম্ভাব্য সব উপায়ে তাদের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষা করছে।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ গত আট বছর ধরে মিয়ানমার থেকে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বহন করে চলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশ এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে পারছে না। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ অঞ্চল আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তার অর্থ হ্রাস পাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক এবং এর পাশাপাশি নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বিদ্যমান মানবিক পরিস্থিতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। রাখাইনে আরাকান আর্মির কাছে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুত রয়েছে। রাখাইন রাজ্যের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে এ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাচার হতে পারে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে পারে। বাংলাদেশ আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ইন্দো-প্যাসিফিক কূটনীতি