শূন্য দারিদ্র্য : অর্থনৈতিক মুক্তির পথনির্দেশ

ঢাকা পোষ্ট ড. এ কে এম মাহমুদুল হক প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৫, ১৪:৪৭

মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে দারিদ্র্য এক অনিবার্য বাস্তবতা, যার প্রকৃতি ও রূপ যুগে যুগে বিবর্তিত হয়েছে। শিকারি-সংগ্রহকারী সমাজে শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা দারিদ্র্যের শিকার হতো, কৃষি যুগে জমির মালিকানার বৈষম্য অর্থনৈতিক শ্রেণি বিভাজন সৃষ্টি করেছিল, আর সামন্ততন্ত্রে চরম শ্রেণি বৈষম্যের ফলে দারিদ্র্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্থায়ী রূপ নেয়।


ঔপনিবেশিক যুগে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর শোষণ বৈশ্বিক দারিদ্র্যকে আরও গভীর করেছে, যার প্রভাব আজও বিদ্যমান। যদিও ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর নীতি ছিল ভিন্ন, কিন্তু লক্ষ্য একটাই—অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য দখলকৃত অঞ্চলগুলোর সম্পদ শোষণ করা। এর ফলে আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুতি, ঘনবসতি বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের মতো দীর্ঘমেয়াদি সংকট সৃষ্টি হয়।


শিল্প বিপ্লবের সময়ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষণ ছিল সীমিত। ১৭৬০-১৮৪০ সালে ব্রিটেনে ৬৫-৮৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাতো। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালের গ্রেট ডিপ্রেশন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়ে, ইউরোপে গণতন্ত্রের পতন ঘটে, আর লাতিন আমেরিকায় তীব্র পণ্য সংকট দেখা দেয়। এই সংকট স্বৈরশাসনের উত্থান ত্বরান্বিত করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।


দারিদ্র্য ইতিহাসের ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে টিকে আছে এবং প্রতিটি নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভিন্ন মাত্রা অর্জন করেছে। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—শূন্য দারিদ্র্য কি আদৌ সম্ভব?


একুশ শতাব্দীতে প্রযুক্তি দারিদ্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়েছে। যদিও একে দারিদ্র্য নিরসনের হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়, তবে এটি নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে, বিশেষত ডিজিটাল বৈষম্য। উন্নত দেশগুলো উচ্চগতির ইন্টারনেট ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছে, যেখানে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করে।



অথচ এই কোম্পানিগুলো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সমান প্রবেশাধিকারের সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে, বরং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে স্বল্প মজুরিতে শ্রমশক্তি শোষণ করছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ‘দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র’, যেখানে শ্রমিকরা কেবল বেঁচে থাকার মতো আয় করে, কিন্তু তাদের জীবনমান উন্নত করার সামর্থ্য থাকে না।


দারিদ্র্য মানব সভ্যতার এক দীর্ঘস্থায়ী বাস্তবতা। আজও বিশ্বে প্রতি ১১ জনের ১ জন চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, যাদের দৈনিক আয় দুই ডলারেরও কম। দক্ষিণ এশিয়ায় ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবনযাপন করে, আর আফ্রিকার দক্ষিণ সুদান (৯৯ শতাংশ), নাইজার (৯৮ শতাংশ) ও নাইজেরিয়া (৯৭ শতাংশ) বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে। বিভিন্ন অঞ্চলে দারিদ্র্যের কারণ ভিন্ন হলেও প্রধান কারণগুলো হলো—প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সম্পদের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সম্পদের অসম বণ্টন।


জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য নির্মূলের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই লক্ষ্যের অন্যতম প্রবক্তা, যার ‘শূন্য দারিদ্র্য’ রূপকল্প ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী আলোচিত।


১৯৮৩ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যা প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিপরীতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এক যুগান্তকারী উদ্যোগ ছিল। তিনি সোনালী ঋণ প্রকল্প চালু করেন, যা কেবল দরিদ্র জনগণের জন্য নির্ধারিত ছিল—একটি ব্যবস্থাপনা যেখানে মূলধারার ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে দরিদ্রদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তার লক্ষ্য ছিল স্বল্প পরিমাণ ঋণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আত্মনির্ভরশীল করা।


অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই উদ্যোগ ব্যাপক সাফল্য লাভ করে, যার ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি পায়। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বাস করতেন যে, নারীরা অর্থ ব্যয়ে অধিক দায়িত্বশীল এবং তারা নিজেদের আর্থিক স্বাবলম্বিতাকে শুধু ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য ব্যবহার করেন না, বরং পরিবার ও সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। তার অভিমত অনুযায়ী, একজন নারী যদি আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হন, তবে তার সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির মানও উন্নত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে সমাজের টেকসই পরিবর্তন আনতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও