মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আর্ট ও মিউজিক থেরাপির গুরুত্ব কতখানি?

ঢাকা পোষ্ট জেসান আরা প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:১৫

বর্তমান যুগে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। উদ্বেগ, বিষণ্নতা, ট্রমা, একাকীত্ব এবং মানসিক চাপ আজকের সমাজে এক সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় মনোচিকিৎসায় কাউন্সিলিং, সাইকোথেরাপি ও প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি আর্ট ও মিউজিক থেরাপি একটি কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


এই দুটি থেরাপিতে কথার পরিবর্তে মানসিক চিকিৎসার কৌশলকে সৃজনশীল কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। জাপান, আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোয় স্কুল, হাসপাতাল, রিহ্যাব সেন্টার, এমনকি অফিসেও এখন এই থেরাপিগুলোর ব্যবহার বাড়ছে। তবে দেশভেদে এর গ্রহণযোগ্যতা, পেশাগত স্বীকৃতি এবং ব্যবহারের মাত্রা আলাদা।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এই থেরাপির ব্যবহার বেশি গড়ে উঠেছে এবং এখানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কোর্স, সার্টিফিকেশন এবং গবেষণার অনেক প্রমাণ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে, প্রবীণদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং কর্মজীবী মানুষের স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এগুলোর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি মূল কেন্দ্র হিসেবে এগুলো নিয়ে গবেষণা করছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে আর্ট ও মিউজিক থেরাপি এখন আর শুধুমাত্র বিনোদন নয় বরং এটি একটি সমগ্রতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে, যেখানে রোগীর শরীর, মন ও আবেগকে একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়।


একটা কেস স্টাডির কথা আমি জানাতে চাই। রিমা, ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী। একসময় সে ছিল চঞ্চল, হাসিখুশি আর স্বপ্নে ভরা। কিন্তু হঠাৎ করেই তার জীবনে অন্ধকার নেমে এলো বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, পড়াশোনার চাপ, আর বন্ধুদের থেকে দূরে সরে যাওয়া। ধীরে ধীরে সে একাকীত্বে ডুবে গেল, কথা বলা বন্ধ করে দিলো, এমনকি স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিলো।


মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তার রোগকে ‘মৃদু বিষণ্নতা’ বলে শনাক্ত করলেন। প্রথমে রিমার চিকিৎসা শুরু হলো ওষুধ ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে। কিন্তু খুব একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল না। তখন থেরাপিস্ট পরামর্শ দিলেন মিউজিক ও আর্ট থেরাপি নেওয়ার জন্য। প্রথম কয়েকটি সেশনে রিমা শুধু নীরবে বসে থাকত একটি শব্দও বলত না। কিন্তু থেরাপিস্ট তাকে বললেন, ‘আপনি কথা না বললেও রঙ আর সুর দিয়ে আপনার মন যা বলতে চায়, তা বলতে পারেন।’


ধীরে ধীরে রিমা তার আবেগ ক্যানভাসে আঁকতে শুরু করল। একদিন সে আঁকল একটি অর্ধেক মুখ এক পাশ অন্ধকারে ঢাকা, আর অন্য পাশ আলোর দিকে তাকিয়ে। থেরাপিস্ট জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই মুখটা কে?’ রিমা ধীরে বলল, ‘এটা আমি... আমি এখনও আলো খুঁজছি।’


এরপরের সেশনে মিউজিক থেরাপিতে ধীরে ধীরে ওঠা সুরের সঙ্গে সে নিজের মন খুলে কথা বলা শুরু করল। প্রতিটি সুরে সে যেন নিজের ভেতরের ব্যথাকে ছুঁয়ে দেখছিল, আবার মুক্তও হচ্ছিল। দশম সেশনের শেষে রিমা বলল, ‘এখন আমার মনে হয়, আমি আবার হাসতে পারি।’ তার বিষণ্নতা কমে গেছে, রাতে ঘুম আসে, আর সে আবার স্কুলে ফিরেছে। এভাবেই রিমা তার নিজের গল্পটা ‘রঙ আর সুরের মাধ্যমে আবার লিখে ফেলেছে।’


আর্ট ও মিউজিক থেরাপি কী এবং কীভাবে এই থেরাপি কাজ করে?


আর্ট থেরাপি (Art Therapy) এবং মিউজিক থেরাপি (Music Therapy) হচ্ছে সৃজনশীল, অবাচনিক থেরাপি পদ্ধতি, যা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। এগুলো এমন মানুষদের সাহায্য করে যারা কথা দিয়ে নিজেদের অনুভূতি বা কষ্ট প্রকাশ করতে পারেন না। এই থেরাপির মাধ্যমে তারা রঙ, ছবি, সুর বা সংগীতের মাধ্যমে নিজেদের মনের গভীর অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারেন।


এগুলো মানুষ নিজেকে বুঝতে, ট্রমা থেকে মুক্ত হতে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই থেরাপি নিতে হলে ব্যক্তিকে আর্ট জানতে হবে না বা সংগীতশিল্পী হতে হবে না। এখানে কাজের মান নয় বরং আবেগ প্রকাশই মুখ্য। তাই যেকোনো বয়সের মানুষ, এমনকি শিশু বা প্রবীণরাও এই থেরাপির মাধ্যমে মানসিক স্বস্তি পেতে পারেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও