
গ্রামের মানুষ এনজিও থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য মহাজনের দ্বারস্থ হয়
ড. শ্যামল চৌধুরী, ক্রাউফোর্ড স্কুল অব পাবলিক পলিসির অধ্যাপক। সেই সঙ্গে সাউথ এশিয়ান ইকোনমিকসের রাজীব গান্ধী চেয়ার এবং অস্ট্রেলিয়া সাউথ এশিয়া রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োজিত আছেন তিনি। ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করে জার্মানির কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমএ করেন। কৃষি অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে তার গবেষণার মূল বিষয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন। ক্ষুদ্র ও মহাজনি ঋণসহ গ্রামীণ অর্থনীতিতে ঋণপ্রবাহের নানা দিক নিয়ে বণিক বার্তায় কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবরিনা স্বর্ণা
‘মহাজনের উপস্থিতিতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিযোগিতা: তত্ত্ব এবং প্রমাণ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন সম্প্রতি উপস্থাপন করেছেন। এ গবেষণার সঙ্গে আপনি সম্পৃক্ত ছিলেন। এর বিস্তারিত জানতে চাই।
এ গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে চেয়েছিলাম যে এনজিও বা এমএফআইয়ের (মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট) উপস্থিতিতে মহাজনি ঋণের কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে। ড. মোহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে ক্ষুদ্র ঋণ চালু করেন। এর অন্যতম কারণ ছিল গ্রামের যেসব নারী প্রচলিত ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না, তারা যেন মহাজন থেকে উচ্চ সুদহারে ঋণ না নেন সেই ব্যবস্থা করা। ড. ইউনূসের আশাবাদ ছিল এভাবে একসময় মহাজনি ঋণের প্রথা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তিনি যখন শুরু করেছেন তখন অন্য কোনো এনজিও ছিল না। পরে ব্র্যাকসহ অন্যান্য এনজিওর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রতিটি গ্রামে গড়ে চার-পাঁচটা এনজিও কাজ করছে। কিন্তু গ্রামে মহাজনি প্রথা এখনো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে দুটি বিষয় উল্লেখ্য।
এক. এনজিওর সংখ্যা বেড়েছে এবং দুই. মহাজনদের প্রভাব কিছুটা কমলেও তারা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আমাদের এ গবেষণার অংশ হিসেবে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান আরডিআরএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। আমরা কতগুলো গ্রাম বাছাই করে আরডিএসকে সেসব গ্রামে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার কথা জানাই। আর কয়েকটা গ্রামে ব্যবসা করতে না করা হয়। মানে আমরা আরডিআরএসের মাধ্যমে একটি Randomised controlled trial পরিচালনা করি। গবেষণার এ পদ্ধতি অনেক নিখুঁত। এটি মেডিকেল গবেষণায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। এতে দেখা গেল, যেসব গ্রামে এনজিওর সংখ্যা বেড়েছে, ওইসব গ্রামে মহাজনি ঋণের সুদহার গড়ে ২৫ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। ফলে গরিব মানুষ যারা আগে শুধু মহাজন থেকেই ঋণ নিত, তাদের অনেক উপকার হয়েছে।