মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

জাগো নিউজ ২৪ অধ্যাপক আব্দুল বায়েস প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৫

মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে এবং সমাজে প্রচুর উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বস্তুত, সরকারের প্রথম টার্গেট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা । এটাই স্বাভাবিক কারণ এর ধকল সবচেয়ে বেশি বহন করে গরিব শ্রেণি যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। মুখরা রমণীকে বশ করতে না পারলেও সংসার কোনোভাবে টিকে থাকে, কিন্তু লাগামহীন মূল্যস্ফীতি বশে আনতে না পারলে সমাজের সমূহ খতির সম্ভাবনা থাকে - ঊর্ধ্বগামী মূল্যস্ফীতি রাজনৈতিক ডিনামাইটে রূপ নিতে পারে। ইতিমধ্যে খানার আয় এবং ব্যয় সমীক্ষা (২০২২) জানাচ্ছে যে, আয় বৈষম্য ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে- যেমন গিনি সহগ নব্বই দশকের শূন্য দশমিক তিন পাঁচ থেকে ২০১০ সালে শূন্য দশমিক চার পাঁচ এবং ২০২২ সালে শূন্য দশমিক চার নয়) এবং মূল্যস্ফীতি , যা গরিবের উপর রিগ্রেসিভ ট্যাক্সের মতো , সেই বৈষম্যে জ্বালানি দিয়ে পরিস্থিতি নাজুক করে তুলছে । তবে দারিদ্র্য এবং বৈষম্য এই দুই সংকটের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসের ইতিবাচক সংবাদে বাঁচোয়া বাংলাদেশ।


পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জায়েদি সাত্তার মনে করেন যে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমস্যার প্রকৃতি ও উৎস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া । প্রায়শ উপেক্ষিত এমন একটি দিক হচ্ছে মূল্যস্ফীতির উপর বিনিময় হারের সঞ্চারণ বা ‘পাস -থ্রু প্রভাব’, এটা কমাতে মানসম্মত অস্ত্র, লক্ষ্যমাত্রা এবং পৌঁছার সময়সীমা ইত্যাদি। আইএমএফ এক অসুখকর অনুভবের দিকে ঠেলে দেয় যখন প্রতিষ্ঠানটি মনে করে যে, ‘অপ্রত্যাশিত সহায়ক অভিঘাত’ না পেলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কয়েক মাস থেকে দুই বছরও লেগে যেতে পারে । এই দীর্ঘ বেদনাদায়ক প্রতীক্ষায় না থেকে গবেষক জায়েদি সাত্তার একটা ‘অপ্রত্যাশিত সহায়ক অভিঘাত’ দেবার কথা বলছেন।


প্রথমত, শুল্ক কাঠামো যৌক্তিক করার সময় এসেছে এবং সেটা শুধু সমকক্ষদের সাথে সমতুল্য করার জন্য নয় বরং আমাদের রফতানিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করা এবং সংরক্ষণে রফতানি -বৈরিতা পরিহার করার জন্য যা দীর্ঘকাল আমাদের রফতানি বৈচিত্র্য করনে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করছে। শুল্কের হার কমানো বা যৌক্তিক করার ক্ষেত্রে একগুঁয়ে প্রতিরোধের পেছনে কারণ রাজস্ব হারানো (আহরণের বিপরীতে ) এবং তথাকথিত ‘শিশুশিল্প’ যুক্তি যে এগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে বেড়ে উঠার জন্য।



২০২২ সালে একই সময়ে ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনা বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত সাপ্লাই চেইন যার ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের) এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার তির্যক অবমূল্যায়ন যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর অবধি ৩০ শতাংশের মতো । আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা হ্রাস পেলেও এই দুই উৎসের দ্বিতীয় পর্বের প্রভাব অনুভূত হতে থাকলো । ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সরকার কর্তৃক জ্বালানির দাম ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করেও লাভ হল না। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের নিচে থাকলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের উপর চড়তে লাগলো ।


এটা এখন পরিষ্কার যে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি প্রধানত ব্যয় বৃদ্ধি- তাড়িত (cost-push) । বিপর্যস্ত সাপ্লাই চেইন এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন একটা সরবরাহ ধাক্কা নিয়ে আসে (supply shock) যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয় এবং গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো অর্থ সম্প্রসারণ দ্বারা পুষ্ট হয়। অবশ্য দ্বিতীয়টি প্রচলিত পদ্ধতি /সুপারিশ যথা আর্থিক সংকোচন এবং সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্টাতে সক্ষম হয়েছে। তার সাথে যুক্ত আছে জুলাই ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারি ঋণ (মূলত টাকা ছেপে নিরেট মূল্যস্ফীতি মুখি পদক্ষেপ) নেবার তাগিদ স্থগিতকরণ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে একটা নিরপেক্ষ রাজস্ব নীতি প্রত্যাশিত যা রাজস্ব ঘাটতি মানিতাইজেসন সীমিত রাখবে।


বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সনাতন সংকোচন নীতি হয়তো চাহিদা সংকোচনে ভূমিকা রাখবে কিন্তু আমদানির মূল্য বৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়ন সঞ্জাত সরবরাহ অভিঘাত মোকাবেলায় উপযুক্ত নয়। . বস্তুত, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আরোপিত প্রকট আমদানি সংকোচনের ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে (স্বল্পতার সুযোগে) এবং এভাবেই সময়ের বিবর্তনে কষ্ট -পুশ ইনফ্লেশনে অতিরিক্ত একটা উপাদান হিসাবে যোগ হয়। মূল্যস্ফীতির একটা বিশেষ চালকের দিকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দেয়া জরুরি এবং সেটা হল বিনিময় হারে ব্যাপক অবমূল্যায়ন। সামস্তিক অর্থনীতিক স্থিতিশীলতার গাড়িটি উল্টে বা উবুড় করে দিয়েছে এমন ঘটনা কারও স্মৃতিতে জাগে বলে তো মনে হয় না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও