জ্বালানি নিরাপত্তা ও সুবিচার সুরক্ষায় ট্যারিফ

bonikbarta.com এম শামসুল আলম প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৪২

২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে দেয়া গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে ক্যাব মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। শুনানির সময় শুনানি বাতিলের দাবিতে অংশীজনরা স্লোগান দেয়, বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মধ্যাহ্ন বিরতি দেয়া হয়। বিরতি শেষে শুনানিতে প্রত্যেকেই শুধু বিবৃতি প্রদান করে। জেরা ও যুক্তি-তর্ক পর্বে কেউই অংশগ্রহণ করেননি। মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব খারিজের দাবিতে ক্যাব যা কিছু বলেছে, এর উল্লেখযোগ্য অংশ:


২. গণশুনানিতে উপস্থাপিত বিইআরসির কারিগরি কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণে দুইবার ভ্যাট নেয়া হয়। কমিটি একবার নেয়ার প্রস্তাব করেছে। তাতে ব্যয় বা ঘাটতি হ্রাস পায় বছরে প্রায় ৩ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। অথচ শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যহার প্রস্তাব অনুযায়ী ৭৫ দশমিক ৭২ টাকা বৃদ্ধি হলে বছরে সম্ভাব্য রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমাণ হবে প্রায় ৩ হাজার ২৪১ কোটি টাকা, যদি বছরে ২৮ হাজার ২২৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়। তাছাড়া গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চলনে সিস্টেমলস ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। কিন্তু বিইআরসির হিসাবে ১ দশমিক ১২ শতাংশ। বাকি অপচয় ও চুরি। তা সমন্বয় হলে বিদ্যমান মূল্যহারে সাশ্রয় হয় প্রায় ১০ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। এ তথ্যাদিতে প্রমাণিত হয়, শুধু ভ্যাট ও সিস্টেমলস ন্যায্য ও যৌক্তিক হলে যে পরিমাণ লুণ্ঠনমূলক ব্যয় রোধ হয়, তাতে বছরে ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। অথচ গ্যাস সরবরাহে সমন্বয়কৃত লুণ্ঠনমূলক ব্যয়গুলো রোধ করা হলে কী পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হয়, তা বিবেচনা না করে মন্ত্রণালয় মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করে এবং বিইআরসি সে প্রস্তাব গ্রহণ করে সেসব ব্যয় সুরক্ষা দেয়। ফলে উভয়ই ভোক্তা স্বার্থ ও অধিকার খর্ব এবং ভোক্তাকে জ্বালানি সুবিচার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত।


৩. মোট গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ সালে যথাক্রমে ২৮ হাজার ৬৪০, ২৮ হাজার ৩৭ ও ২৮ হাজার ২২৪ (প্রাক্কলিত) মিলিয়ন ঘনফুট। দেশীয় গ্যাস সরবরাহ হয়েছে যথাক্রমে ২২ হাজার ৬৫১, ২১ হাজার ৮২ ও ২০ হাজার ৬৭ (প্রাক্কলিত) মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ক্রমন্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। জ্বালানি সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। গ্যাসে এখন ২৫ শতাংশ এলএনজি। ২০৩০ সালে হবে ৭৫ শতাংশ। আগামীতে জ্বালানি নিরাপত্তায় অনিশ্চয়তা আরো বাড়বে। অথচ সব চার্জ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।



৪. ২০২৩ সালে মূল্যহার নির্ধারণের ক্ষমতা হাতে পেয়ে এক বছরে বিগত সরকার উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জহার বৃদ্ধি করে যথাক্রমে কম-বেশি ৪০, ১১৪ ও ৬০ শতাংশ। সিএনজি অপারেটর ও বিইআরসি চার্জহার বৃদ্ধির দরকার না হলেও পেট্রোবাংলা ও আরপিজিসিএলের চার্জহার বাড়ানো হয়েছে যথাক্রমে ২৪ ও ১০৯ শতাংশ। গ্যাসের মূল্যহার বৃহৎ, মাঝারি এবং ক্ষুদ্র, কুটির শিল্পে বৃদ্ধি করে যথাক্রমে ১৫০, ১৫৫ ও ১৭৮ শতাংশ। ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ৯৭ শতাংশ। বিদ্যুতে ২০৯ শতাংশ। বর্তমান সরকারের আমলে শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যহার এলএনজির মূল্যহারের সমান হবে। অর্থাৎ বৃদ্ধি হবে ১৫২ শতাংশ। এসব তথ্যদিতে প্রমাণিত হয়, বিগত সরকার দেশকে কেবল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি বাজারে পরিণত করেনি, শিল্পজাত পণ্যেরও আমদানি বাজারে পরিণত করার প্রক্রিয়ায় ছিল। বর্তমানে মন্ত্রণালয় ও বিইআরসি ওই প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।


৫. ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে জানা যায়, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের ৬৫ শতাংশ অর্থ খরচ হয়নি। ৩৫ শতাংশ বিদেশী ঠিকাদারের বিল দিতে ব্যয় হয়েছে। জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়ন গুরুত্ব পায়নি। ফলে গ্যাস সংকট মোকাবেলায় ২০৩০ সালে গ্যাসের ৭৫ শতাংশ হবে এলএনজি। বিগত সরকারের আমলে অত্যন্ত সুচতুরভাবে মন্ত্রণালয় এভাবে বিইআরসি সহযোগিতায় এলএনজি আমদানির প্রেক্ষাপট তৈরি করে। এ সরকারের আমলে তারই ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে।


৬. বিগত সরকার প্রতিযোগিতাবিহীন ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে সৌরবিদ্যুৎ উন্নয়নে বৃহৎ পরিসরে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে। বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী সেসব প্রকল্পের বিদ্যুতের মূল্যহার ছিল কম-বেশি ১৪ টাকা। অথচ এ বিদ্যুৎ সাড়ে ৪ টাকারও কম ব্যয়ে উৎপাদন করা যায়। বর্তমান সরকার বিগত সরকারের নেয়া ওই উদ্যোগ বাতিল করে প্রতিযোগিতামূলক বিনিয়োগ আহ্বান করেছে। কিন্তু বিদ্যুতের মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক পর্যায়ে কতটা নামিয়ে আনা যাবে, বিদ্যুৎ বিভাগের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। এ খাত উন্নয়নে স্রেডার সক্ষমতা উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন দরকার, বিইআরসির আওতায় অংশীজনদের অংশগ্রহণ দরকার এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে নিষ্ক্রিয় রাখাও দরকার। সেই সঙ্গে বটোম-আপ অ্যাপ্রোচে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প হিসেবে এ খাত উন্নয়নে দেশীয় উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা দরকার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও