
স্বায়ত্তশাসন নামেই, ‘মন্ত্রণালয়ের দাদাগিরি’ কী চলবেই?
‘মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
“মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলাকে অধীনস্ত করে রাখতে চায়। শিল্পকলা যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান- তারা সেটা মানতে চায় না,” অভিযোগ শিল্পকলা মহাপরিচালকের।
সৈয়দ জামিলের এমন বক্তব্য প্রশ্নের মুখে ফেলেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে। প্রশ্ন উঠেছে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাজে মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করতে পারে কিনা?
১৯৮৯ সালে প্রণীত যে আইনের অধীনে শিল্পকলা একাডেমি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে চলছে, সেই আইনে বলা আছে, “একাডেমির সাধারণ পরিচালনা ও প্রশাসন একটি পরিষদের উপর ন্যস্ত থাকবে এবং পরিষদ সেই সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কাজ করতে পারবে, যা একাডেমি কর্তৃক প্রযুক্ত ও সম্পন্ন হইতে পারে।”
আইনেই বলা আছে, “মহাপরিচালক একাডেমির সার্বক্ষণিক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যসম্পাদন করবেন এবং পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দায়ী থাকবেন।”
কিন্তু সৈয়দ জামিল বলছেন, “মন্ত্রণালয় শিল্পকলাকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানছে না। তারা অধীনস্ত করে রাখতে চায়। তারা চায়, আমাদেরকে তাদের সকল নির্দেশ মেনে চলতে হবে। শিল্পকলা একাডেমি যে একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এটা তারা মানে না। আমাকে চার দিকে ঘিরে রেখেছে, একটা পা ফেলতে দিচ্ছে না। কাজ করতে দিচ্ছে না।”
অন্যদিকে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলছেন, জামিল আহমেদের ‘অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা’।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের অভিযোগ যে সৈয়দ জামিলই প্রথম করছেন, তা নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘দাদাগিরি’ করার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। তবে কোনো সমাধান হয়নি। মূলত নিয়ন্ত্রণ করার বাসনা থেকেই মন্ত্রণালয় বার বার হস্তক্ষেপ করে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাজে।
এবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদত্যাগের মধ্যদিয়ে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ‘মন্ত্রণালয়ের দাদাগিরি’র বিষয়টি আরো বড় আকারে সামনে এলো।
সৈয়দ জামিল অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর দিকে। শিল্পকলার মহাপরিচালক অভিযোগ করেছেন, উপদেষ্টা তার কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। আইন অনুযায়ী বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে তা করার এখতিয়ার সংস্কৃতি উপদেষ্টার আছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
শিল্পকলা নিয়ে আলোচনায় অনিবার্যভাবেই আসে বাংলা একাডেমির কথা। আইন অনুযায়ী, বাংলা একাডেমি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন সময় নিজেদের অধীনস্ত ভেবে আসছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।