সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় দায়িত্ব দিতে হবে

www.ajkerpatrika.com সাজ্জাদ সিদ্দিকী প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০২৫, ১০:১১

ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে।


মব জাস্টিসের পর আবার হঠাৎ করে ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণ কী?


ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী: আমাদের জাতিগত সমস্যা হচ্ছে, আমরা শব্দে আটকে যাই। শব্দ নিয়ে আমরা বেশি পরিমাণে মাতোয়ারা হয়ে যাই এবং তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি। মব জাস্টিস তেমনি একটা ভুল শব্দ। মব কখনো জাস্টিসকে এনশিউর করে না। এটাকে ‘মব ভায়োলেন্স’ বলাটাই যৌক্তিক। মবের ঘটনা ঘটিয়ে একটা সংঘবদ্ধ গ্রুপ পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। আসলে তাদের আইনি কাঠামোর মধ্যে দেখতে হবে। এ জন্য আমার মতে, এই ধরনের ঘটনাসমূহকে ‘মব জাস্টিস’ না বলে ‘মব ভায়োলেন্স’ বলা অধিকতর শ্রেয়।


‘মব ভায়োলেন্স’ শেষ হতে না হতেই আমরা এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে দেখছি। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য আমাদের যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করার দরকার ছিল তা আমরা করতে পারছি না, সেটা আগে স্বীকার করে নিতে হবে। কেন পারছি না, তার কারণও খুঁজে বের করতে হবে। এরপর একটা সময় উপযোগী সিদ্ধ হস্তে সেসবকে পরিশীলিত করতে হবে।

দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রধান দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর। অন্যদিকে, বহিঃশক্তির আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো সশস্ত্র বাহিনীর। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ বাহিনী যথাযথ অবস্থায় নেই। নিকট অতীত কৃতকর্মের জন্য পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে নির্লিপ্ত। বাহিনীর অনেক সদস্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেও সময় পার করছেন। কারও কারও বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান। তাই বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।




আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা বলি, কয়েক দিন আগে আমি একটি পুলিশ ফাঁড়ির সামনে রং সাইডে একটা গাড়ি পার্ক করে থাকতে দেখি। আমি সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর নিকটবর্তী পুলিশকে ব্যাপারটা বলি। তিনি তখন বললেন, ‘স্যার, আমরা এ কাজ সমাধান করতে পারব না।’ কেন পারবেন না—আমার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘ওই গাড়িওয়ালা তাঁর ক্ষমতা দেখিয়ে আমাদের ধমকাতেও পারেন। কারণ, আমাদের এখন দেখার কেউ নেই।’ অর্থাৎ পুলিশকে আমরা এখন একটা অসহায় অবস্থার মধ্যে রেখে দিয়েছি। পুলিশকে এই অসহায় অবস্থায় রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব নয়। মব ভায়োলেন্সের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব হচ্ছে না, এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পুলিশের ওপর সাধারণ জনগণের আস্থার চূড়ান্ত ঘাটতি।


সেটা কেন করা সম্ভব হচ্ছে না?


ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী: লম্বা সময় ধরে পূর্ববর্তী সরকারের অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীনে থাকার ফলে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ক্রমেই অগণতান্ত্রিক হয়ে উঠেছিল। এই ব্যবস্থাপনার সমাপ্তি ঘটলেও বর্তমানে আগের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে পারছেন না। এই আত্মবিশ্বাস না থাকাই দায়িত্ব পালনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারও তাদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ এবং এ কাজে সরকারের অনাগ্রহ স্পষ্ট। নিরাপত্তাহীন ব্যক্তির পক্ষে অন্যের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই তাকে ভরসার আওতায় আনতে হলে ওপর থেকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন।


আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের দাগি সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তারা ছাড়া পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছিল। এখনকার পরিস্থিতির জন্য তারা দায়ী নয় কি?


ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী: আমরা যখন কোনো ঘটনাকে কারণ-পরম্পরার ভিত্তিতে দেখি, তখন একটি নির্দিষ্ট মাত্রা (ডাইমেনশন) থেকেই মূল্যায়ন করি, যা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এসব ঘটনা বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা উচিত। আমাদের দেশে দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার ফলে দুই প্রধান দলেই ভালো ও মন্দ উভয় ধরনের মানুষ রয়েছে। তাই শুধু দাগি আসামিদের মুক্তি পাওয়াকে অপরাধ বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হিসেবে দেখাটা সঠিক হবে না।


আমাদের দেশে পুঁজিবাজার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করে, যার কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম নেই। একইভাবে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ও মুখ্য হয়ে ওঠে না। বরং আগে যারা চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করত, পরিস্থিতির পরিবর্তনের পর সেই জায়গাটি এখন বিএনপি-জামায়াতসহ আরও কিছু গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী জেলে ছিলেন; তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন কি না, তা আমাদের জানা নেই। তবে যাঁরা মুক্তি পেয়েছেন, তাঁরাই যে চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী—এমনটি সরাসরি বলা যাবে না। কারণ, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল এবং যারা ছিল না, তাদের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রে একধরনের সমঝোতা ছিল। তাদের মধ্যে গোপন চুক্তি হওয়া অসম্ভব কিছু না, যার মূলমন্ত্র এমন হতে পারে যে, ‘তোমরা এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করো, বিনিময়ে আমাদের নিরাপত্তা কিংবা আশ্রয় দাও।’ মূলত, এই রকম পারস্পরিক বোঝাপড়ার কারণে আমরা সিন্ডিকেটের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না বলেই আমার ব্যক্তিগত ধারণা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও