অভিবাসী বহিষ্কার ও ৬০ কোটি টাকায় আমেরিকার নাগরিকত্ব!

যুগান্তর আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৭

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে তার শপথে আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীর শপথের মতো ‘অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ’ করার প্রতিশ্রুতি উচ্চারণ করতে হয় না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও করতে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের শুধু ‘সংবিধান সংরক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তার’ শপথ নিতে হয়। সেজন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে কটাক্ষ করে কিছু বলতে অথবা তার কোনো বক্তব্য যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণাপ্রসূতও হয়, তা ব্যক্ত করতে তাকে সতর্কতা বা কৌশল অবলম্বন করতে হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের আইনই তাকে এবং সবাইকে এ স্বাধীনতা দিয়েছে। আমেরিকার সংবিধানে সুরক্ষিত বাক্স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের বদৌলতে কারও ঘৃণা-বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রত্যক্ষভাবে কিছু করতে পারে না। যদিও আমেরিকার কোনো আইনে ‘হেইট স্পিচ’ বা ‘ঘৃণামূলক বক্তব্য’ বলে কিছু নেই এবং দেশটির সুপ্রিমকোর্ট বিভিন্ন সময়ে এ রায় দিয়েছেন। পাশ্চাত্যের অনেক দেশে ঘৃণামূলক বক্তব্য বিচারযোগ্য অপরাধ হলেও আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী ‘হেইট স্পিচ’ও আইন দ্বারা সংরক্ষিত; অর্থাৎ কারও প্রতি ঘৃণার প্রকাশ করা বা গালি দেওয়াও বাক্স্বাধীনতার অংশ।


ডোনাল্ড ট্রাম্প বাক্স্বাধীনতার অবাধ প্রয়োগ করতে কোনো ছাড় দেন না। তিনি নিজেকে ও তার মতো গাত্রবর্ণের মানুষ বা ককেশীয়দের প্রতিনিধিত্ব করেন, অন্য কারও নয়। তিনি কেবল যুক্তরাষ্ট্রে নয়, শ্বেতাঙ্গপ্রধান বিশ্বে শ্বেতাঙ্গশ্রেষ্ঠত্বের প্রতিভূ। তার সেই শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ ঘটাতে তিনি সুযোগ পেলেই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসকারী চাইনিজ, হিসপানিক, কৃষ্ণাঙ্গ এবং অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ, যারা এমনকি ন্যাচারালাইজড সিটিজেন অথবা গ্রিন কার্ডধারী, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে দ্বিধা করেন না। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তার বিতৃষ্ণা প্রকাশে অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের প্রতি তার মনোভাব আড়াল করেননি। তিনি সোজাসাপ্টা বলে ফেলেন, এসব অভিবাসী আমাদের দেশের ‘রক্তকে বিষাক্ত করছে’। তিনি বিশ্বাস করেন, আমেরিকায় যত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে, এর সিংহভাগ ঘটায় অভিবাসীরা এবং তাদের সিংহভাগ অশ্বেতাঙ্গ। দরিদ্র, অসহায় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান গ্রহণ এবং ৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিত্তবান বিদেশিদের ‘গোল্ড কার্ড’ দিয়ে নাগরিক হওয়ার সুযোগদানের মধ্যে তিনি কোনো বৈপরীত্য দেখেন না। অর্থের কদর সর্বত্র অভিন্ন।



অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ধরপাকড় এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের ডিপোর্ট বা বহিষ্কার করার দায়িত্বে নিয়োজিত ফেডারেল প্রতিষ্ঠান ‘আইসিই’ (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) ইতোমধ্যে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের আটক করে সামরিক বিমানযোগে তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা সর্বাধিক। আটক ভারতীয়ের সংখ্যাও অধিক। সেদিক থেকে আটক বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়। জানুয়ারির শেষ নাগাদ মাত্র চারজন বাংলাদেশি ইমিগ্রান্টের আটকের খবর পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের আটক করার প্রচেষ্টা জোরদার হওয়ার পাশাপাশি আটক ভারতীয়দের হাতকড়া পরানো অবস্থায় দেশে প্রেরণ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে ভারতে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো পার্লামেন্টে ও রাজপথে সরকারের সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছে। ‘আইসিই’র অভিযান এত জোরদার করা হয়েছে, গত এক মাসে বিভিন্ন দেশের ২০ হাজারের অধিক অবৈধ ইমিগ্রান্টকে তারা আটক করেছে এবং বিমানের প্রাপ্যতাসাপেক্ষে তাদের পর্যায়ক্রমে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হচ্ছে। আইসিই জানিয়েছে, আটকাভিযানে বিরতি দেওয়া হবে না বা মন্থরও হবে না। আটককৃতদের তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব না হলেও অন্তত ৩০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে মূল ভূখণ্ডের বাইরে কিউবার গুয়ান্তনামো বে’তে রাখা হবে।


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দুটি কাজ তড়িঘড়ি শুরু করেছেন, তার একটি অভিবাসী বিতাড়ন এবং অন্যটি সরকারি জনবল ছাঁটাই করে অর্থ সাশ্রয়। অভিবাসী বিতাড়নের সঙ্গে নতুন যে উপসর্গ যোগ হয়েছে, তার মধ্যে বহু বছর আগে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে আগত তাদের শিশুসন্তান, যারা এতদিনে তরুণ বয়সি, তাদের জন্য ফেডারেল সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করার ঘোষণা। এর মাধ্যমে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তার অবস্থানকে আরও কঠোর করেছেন। তাদের ফেডারেল সুবিধা বন্ধে তিনি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, যে আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত ব্যক্তিরা আর কোনো সরকারি সহায়তা পাবেন না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী তাদের শিশু-কিশোর সন্তানরাও আর কোনো সরকারি সুবিধার আওতায় আসবে না। আমেরিকার অভিবাসনব্যবস্থাকে কঠোর করার পাশাপাশি ফেডারেল ব্যয় সংকোচন করা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান কারণ। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা লাভ করত, তারা ট্যাক্স রিটার্নের সুবিধাও পেত। নতুন আদেশে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও