শড়াতলায় নিষেধাজ্ঞা: এভাবে কি বহু মত-পথের দেশ গড়া সম্ভব

প্রথম আলো হরিণাকুণ্ড ড. নাদিম মাহমুদ প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:২১

কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের একটি কপি ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে দেখে বিশ্বাস করতে পারিনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক (সমকালে) ‘গ্রামে নিষিদ্ধ বাদ্যযন্ত্র, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ঢুকতে মানা’ শিরোনামে খবরটি প্রথম পাতায় ছেপেছে।


ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফলসী ইউনিয়নে অবস্থিত একটি গ্রাম শড়াতলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই স্ট্যাম্পের বর্ণনায় বলা হচ্ছে, এতদ্বারা শড়াতলা সব গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে জানানো যাচ্ছে, সব প্রকার বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ করা হলো। যাঁরা বাদ্যযন্ত্র বাজাবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সেই সঙ্গে তাঁদের চার হাজার টাকা জরিমানা করা হবে এবং তাঁদের পিতা–মাতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করার কথা উল্লেখ করে ৯৫% মানুষ শিক্ষিত ও ২০ জনের মতো সরকারি কর্মকর্তার ওই গ্রামে ‘হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের’ মানুষদেরও গ্রামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।


সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের গ্রামগঞ্জে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। যেমন ২০২৩ সালে নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার এক গ্রামে বিয়ে, জন্মদিন বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হয়। গ্রামে কেউ গানবাজনা করলে তাঁকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল। সেই সময় এ ঘটনা বেশ আলোচনা তৈরি করে। তখন সংস্কৃতিকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সুর ও গানের বহুমাত্রিক ঐতিহ্যের গ্রামবাংলার সংস্কৃতিমণ্ডল যে অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে গেছে, তা আমাদের কারও অজানা নয়। সেখানে এখন হাজির হয়েছে আর্থসামাজিক নতুন বাস্তবতা ও নানা আদর্শিক দ্বন্দ্ব বা প্রভাব।



শড়াতলা গ্রামটির এই নোটিশ এমন সময় এল, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নানা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এখানে ধর্মীয় মহলের আপত্তি ছাড়াও রাজনৈতিক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বাধা আসছে। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ঢাকায় মহানগর নাট্য উৎসব, উত্তরায় বসন্ত উৎসব, চট্টগ্রামে বসন্ত উৎসব, টাঙ্গাইলের ঘুড়ি উৎসব, গোয়াইনঘাটে যাত্রাগান প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে গেছে বা আয়োজনই করা যায়নি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির বইমেলা ঘিরে একের পর এক ঘটনা ও তর্কবিতর্ক আমরা দেখলাম। এসব ঘটনা ও অভিযোগ সত্যি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।


এর আগে আমরা দেখেছি গত ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় দেশনাটক দলের প্রদর্শনী চলার সময় বন্ধ করার মধ্যে দিয়ে। নাট্যকর্মীদের একাংশের প্রতিবাদের মুখে যেভাবে মাঝপথে নাটক বন্ধ করে দেওয়া হলো, সে সময় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর সপ্তাখানেক পর ৮ নভেম্বর দেশের নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদের ওপর হামলা হলো। এরপর তাঁকে মঞ্চনাটকে বাধা দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এরপর বেশ কিছু নারী অভিনেত্রী-শিল্পীদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।


দেশের কয়েকটি স্থানে নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করার মতো ঘটনা ঘটেছে। পরে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের উদ্যোগে আবার খেলার আয়োজন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নারীদের ফুটবল খেলা নিয়ে একধরনের শঙ্কা থেকেই যায়। যদিও এ বছর নারী ফুটবল দলকে একুশে পদক দেওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে দারুণ এক প্রশংসনীয় কাজ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।


গত দেড় দশকে দেশে ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপনে তরুণ-তরুণীর মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির কারণে আমাদের পরিবার ও সমাজে এখন এমন অনেক দিবসই ঢুকে পড়েছে। সেগুলোর সঙ্গে আমরা অভ্যস্তও হয়ে পড়েছি। সেসব দিবসকে ঘিরে নানা আয়োজন আমাদের বিনোদনের অংশও হয়ে গেছে। এসব দিবসকে ঘিরে নানা ব্যবসায়িক আয়োজনও থাকে। একটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও এখানে যুক্ত থাকে। আবার এমন অনেক দিবস আছে, যা পালনে অনেকে পছন্দ করেন না, অন্যকেও পালনে নিরুৎসাহিত করেন। কিন্তু কোনো দিবস জোর করে পালন করতে বাধ্য করা বা পালনের সময় বাধা দেওয়া, অর্থাৎ নীতি পুলিশিং করা, তা কোনোভাবেই মানা যায় না। ভালোবাসা দিবসে টাঙ্গাইলে ফুলের দোকানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এভাবে একজনের ব্যবসার ক্ষতি করার তো মানে হয় না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও