তিস্তার রাজনীতি, রাজনীতির তিস্তা

বিডি নিউজ ২৪ মীর রবি প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৫৪

তিস্তা শুধু নদী নয়, তিস্তা ইস্যু শুধু পানির বিষয়ও নয়। বন্যা রোধ ও পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তিস্তা খনন, ভাঙন থেকে বাঁচতে পাড় বাঁধা অর্থাৎ পানি ও নদী ব্যবস্থাপনাও তিস্তার আবশ্যক বিষয়। সামগ্রিকভাবে তিস্তা উত্তরাঞ্চলের নদীপাড়ের মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন।


তিস্তা নদীকেন্দ্রিক এই জনপদের মানুষের জীবন নিয়ে রাজনীতির ইতিহাসও আজকালের ঘটনা নয়। পাকিস্তান আমল ও তার পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে এ নিয়ে রাজনীতিও কম হয়নি। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি দলই রাজনীতি করেছে। ৭৫ বছরের পানি রাজনীতির সঙ্গে এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার রাজনীতি। তিস্তা সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেখিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নানা সময়ে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভোট নিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর ৫৩ বছরের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দলই এর কাঙ্ক্ষিত ফল এনে দিতে পারেনি। এ নিয়ে দেশের মানুষের আক্ষেপের কমতি নেই।


সর্বশেষ সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা জনপদের মানুষের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিল। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পাওয়ার চায়না দীর্ঘ সমীক্ষা শেষে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। অপেক্ষা ছিল কাজ শুরুর। আওয়ামী শাসনামলেই ওই স্বপ্ন ঝুলে যায় ভারত-চীনের দ্বৈরথে। ভারতকে সামলিয়ে কিংবা ভারতের সঙ্গে সমঝোতা করে চীনকে দিয়ে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিগত সরকার যথার্থ প্রক্রিয়ায় কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল তা আমরা জ্ঞাত নই। তবে বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে তিস্তাপাড়ের জনসাধারণ মনে করেন, পানি সমস্যার সমাধান ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন-ভারত উভয়কেই প্রয়োজন। কোনো পক্ষকে বাদ দিয়ে এটা সম্ভব নয়। এজন্য আবশ্যক বহুপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় ভারতের সঙ্গে যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে, ওই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সমন্বয় করা কঠিন বলে মনে করছেন অনেকেই। এক্ষেত্রে চীন-ভারত উভয় দেশকে বাদ দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থার কথা তুলেছেন কেউ কেউ।



তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিকল্প ব্যবস্থাপনার প্রধান অংশজুড়েই রয়েছে প্রকল্পের অর্থায়ন। তিস্তা নদী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা প্রধান সংগঠন ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নের দাবি তুলেছে। তাদের মতে ঋণজনিত জটিলতা ও দোদুল্যমান পরিস্থিতি কাটিয়ে তুলতে নিজস্ব অর্থায়নই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। নিজস্ব অর্থায়ন ব্যতীত প্রকল্পের কাজ শুরুর করার বিকল্প নেই। তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও জীবনমানের উন্নয়নে দেশীয় অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে করণীয় হিসেবে তারা ছয়টি দাবি উত্থাপন করেছেন:


১. তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘তিস্তা কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা।


২. সরকারিভাবে ‘তিস্তা বন্ড’ চালু করা।


৩. রংপুর বিভাগের উন্নয়ন বৈষম্য নিরসনে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করা।


৪. তিস্তা মহাপরিকল্পনার অর্থায়নে সারচার্জ নির্ধারণ করা।


৫. তিস্তা অববাহিকার পাঁচ জেলায় আদায়কৃত রাজস্ব তিস্তা মহাপরিকল্পনায় ব্যবহার করা।


৬. পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় বরাদ্দকৃত অর্থ তিস্তা মহাপরিকল্পনার অর্থায়নে যুক্ত করা।


মোটাদাগে তারা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজস্ব তহবিল গঠন এবং ওই তহবিলে অর্থ জোগাড় করতে সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক প্রস্তাব রেখেছেন। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে যদি তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে এই প্রকল্প শুরু করতে আর্থিক যে সঙ্কট রয়েছে, তা সহজেই কাটিয়ে ওঠা যাবে। এটাকে নিশ্চিতভাবে উত্তমপন্থা হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। এজন্য নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন সকল রাজনৈতিক দলের সংহতি ও জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্য ব্যতীত সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।


তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সঙ্কট সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে বড় প্রশ্নটি হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহায়তা। তিস্তা যে গতি-প্রকৃতির নদী, তাতে করে পরিবেশসম্মত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় নদী শাসনে বেশ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এজন্য পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষিত রেখেই কারিগরি সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন অধিকতর উন্নত নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রযুক্তি এবং দক্ষ শ্রমশক্তি। এখানেও আমাদের চীনের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। কেননা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সারাবিশ্বে চীনের সমতুল্য আর কেউ নেই। সুস্পষ্টভাবেই প্রযুক্তিগত সহায়তায় চীনের বিষয়ে প্রধানত ভারতের আপত্তি। নিজেদের সুরক্ষায় তারা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চীনকে কাজ করতে দিতে মোটেই আগ্রহী নয়। এই সঙ্কট উত্তরণে কার্যত কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


তিস্তার উৎপত্তি ও পানির উৎসস্থল ভারত হওয়ায় এই নদীর গতি-প্রকৃতি সবটাই ভারতের ওপর নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক নদী আইনের তোয়াক্কা না করায় এই সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। পানি সঙ্কট উত্তরণ এবং তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সমঝোতাও জরুরি। এখানেও চীন ও ভারতের সঙ্গে সমন্বয়ের বিকল্প নেই। অর্থাৎ যে পথেই আমরা এগোই না কেন, ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছাড়া তিস্তার পানি চুক্তি ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনোটাই বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই। আন্তঃসীমান্ত নদী হিসেবে তিস্তা নিয়ে ভারতের নানা ধরনের আপত্তি, সংশয় ও উদ্বেগকে পাশ কাটানো একেবারেই অসম্ভব। দুই দেশের নিরাপত্তা স্বার্থ বিবেচনায় রেখে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ত্রিদেশীয় সমঝোতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকগণ। তাদের মতে, তিস্তা বাংলাদেশ-ভারত মিলে আন্তঃসীমান্ত নদী, তাই প্রধানত এ দুই দেশকেই আগে দ্বিপাক্ষিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এরপরেই সম্ভব বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও