পুষ্টিগুণে সাদা চালের চেয়ে এগিয়ে কালো চাল, বলছেন গবেষকেরা
ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঘন দুধের পায়েস কিংবা মচমচে তেল পিঠা—এসব বাঙালির বড্ড চেনা। এবার চেনা পিঠার ‘রূপ’, গুণ ও স্বাদেই নতুনত্ব আনতে চেষ্টা করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। কালো চালের পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁরা। গত ২৫ জানুয়ারি এই চাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার তাঁরা হাজির করেছিলেন দর্শনার্থীদের সামনে।
গবেষকেরা বলছেন, কালো চাল দেখতে যেমন চমকপ্রদ, তেমনি পুষ্টিগুণেও সাদা চালের তুলনায় বহুগুণ এগিয়ে। গবেষক দলের প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. ছোলায়মান আলী ফকির জানালেন, রঙিন চাল দেখতে লাল, কালো, বেগুনি কিংবা বাদামি হতে পারে। এর মধ্যে লাল ও কালো রঙের চাল নিয়ে তিন বছর ধরে গবেষণা করেছেন তাঁরা। তাঁদের গবেষণায় চালের বাইরের আবরণে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কালো চালে জিংক ও আয়রনের পরিমাণ সাদা চালের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম কালো চালে অ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ ১ হাজার ১২০ থেকে ৭ হাজার ৩৫ মিলিগ্রাম, যেখানে সাদা চালে এটি প্রায় অনুপস্থিত।
এ ছাড়া কালো চালের প্রতি গ্রামে মোট ফিনলের পরিমাণ ৭ থেকে ১০ মিলিগ্রাম এবং ফ্লাভোনয়েডের পরিমাণ ৫ থেকে ৬ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, যা সাদা চালের তুলনায় এক থেকে দেড় গুণ বেশি। এই অ্যান্থোসায়ানিন, ফিনল ও ফ্লাভোনয়েড অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি এগুলো অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসম্পন্ন, যা দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। বিশেষত, এশিয়ার মানুষের খাদ্যতালিকায় জিংক ও আয়রনের ঘাটতি একটি সাধারণ সমস্যা। কালো চাল সেই ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই গবেষকেরা পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে কালো চাল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।