সংগ্রামী ছাত্র-জনতার নতুন দল কিভাবে আসছে

কালের কণ্ঠ গাজীউল হাসান খান প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:১৮

দেশে কোনো নতুন রাজনৈতিক দল হবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। তবে ইদানীং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে একটি দল গঠন করার সংবাদে দেশব্যাপী বেশ কিছুটা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দল গঠন নিয়ে গুঞ্জন কিংবা আলাপ-আলোচনা অনাকাঙ্ক্ষিত কিংবা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।

কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে সে নতুন দল গঠন নিয়ে সৃষ্ট নানাবিধ সন্দেহের কারণে। সন্দেহের মূল কারণ হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে কয়েকজন ছাত্রনেতার অবস্থান নিয়ে। কারণ প্রথাগতভাবে ক্ষমতার অংশীদার থাকা অবস্থায় কোনো দল গঠনের প্রক্রিয়া সংগত নয় বলে মনে করাটা অসংগত নয়। এ কথা ঠিক যে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিংবা তাঁর বর্তমান প্রশাসনের কেউ কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল থেকে আসেননি, তবে তাঁদের কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিশ্বাস থাকতেই পারে।

তাতে অসংগতি কিংবা অন্যায়ের কিছু নেই। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দেশের কয়েকটি নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রদের কাছ থেকে। তাঁদের অভিযোগ কিংবা বক্তব্য হচ্ছে, যেভাবেই হোক বর্তমানে ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করলে সেটা হবে রাজনৈতিক পক্ষপাতের দায়ে অভিযুক্ত কিংবা  কলঙ্কিত। কারণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দিক থেকে সেটা কোনো কাঙ্ক্ষিত আচরণ নয়।


কোনো রাজনৈতিক দল গঠন বা সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে হলে সেসব ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কিংবা একটি দলনিরপেক্ষ অস্থায়ী সরকারের চৌহদ্দি কিংবা প্রভাববলয় থেকে যেভাবেই হোক বেরিয়ে আসতে হবে। সেটাই হবে নীতি-নৈতিকতাভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক আচরণ। সে কথাটিই প্রথম থেকে বলে এসেছেন বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাতে রাজনৈতিক বিরূপতা কিছু আছে বলে কেউ মনে করে না।



বিগত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সংগ্রামী ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান এ দেশের আপামর জনসাধারণকে দিয়েছে নতুন আঙ্গিকে একটি মুক্তির পথনির্দেশ।


তাতে দেশবাসী অবশ্যই ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞ। সে সংগ্রামী ছাত্র-জনতার যৌথ উদ্যোগে যদি নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, তাকে তো দেশবাসী শুভ কামনা জানাবেই। কিন্তু এখানে সংগত প্রশ্ন হলো, জন্মের আগেই ছাত্র-জনতার সে প্রস্তাবিত দল যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। নৈতিক দিক থেকে যেন গ্রহণযোগ্যতা না হারায়। সে কারণেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে যে কজন ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছেন তাঁরা প্রস্তাবিত দলে যোগ দিলে সরকারি দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে। আর যাঁরা দলে সরাসরি যোগ না দিয়ে সরকারে থাকতে চান, তাঁরা দায়িত্ব পালন করে যাবেন। কিন্তু অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, সেটাও ঠিক হবে না। কারণ নবগঠিত দলটি হবে সরকারে কাজ করা ছাত্রনেতাদেরই আশীর্বাদপুষ্ট। সুতরাং দল গঠিত হলে সরকারের সব পর্যায় থেকে তাঁদের সরে যেতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারটি একটি নির্দলীয় প্রশাসন বলে গণ্য হয়ে থাকে। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে জড়িত নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী জনতার অংশ হিসেবে, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে নয়। বাদবাকি উপদেষ্টারা হচ্ছেন পেশাজীবী মানুষ, যাঁরা সরকারি কিংবা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছেন। তাঁরা সরাসরিভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। তা ছাড়া প্রকাশ্য সমর্থকও নন।


জনগণের রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর প্রায় পাঁচ দশক হতে চলল। এর মধ্যে তিনবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল তারা। তারপর বিএনপির ওপর নেমে আসে এক অশুভ রাহুর গ্রাস। এক-এগারোর পর দীর্ঘ দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী কিংবা আরেক অর্থে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। এ সময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিএনপির ওপর হামলা-মামলা, জেল-জুলুম এবং নির্যাতন-নিষ্পেষণসহ নেমে আসে অত্যাচারের খড়্গ কৃপান। এ সময়ে ওপরে উল্লিখিত দুটি দলের কত লাখ নেতাকর্মী হত্যা, গুম, জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি। ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভারতে পলায়নের পর উল্লিখিত দুটি দল মনে করেছিল এবার বুঝি দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইবে এবং কর্তৃত্ববাদী কিংবা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটবে। একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং একটি জনগণের সরকার গঠিত হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংবিধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রশ্নে দেখা দেয় একটি জটিল পরিস্থিতি। এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষও দেখা দেয়। বিএনপি এবং জামায়াতসহ বিভিন্ন দল জরুরি কিংবা অত্যাবশ্যক সংস্কারের বিরুদ্ধে নয়। তবে তাদের মতে সেগুলো একটা অনির্দিষ্টকাল যাবৎ চলতে পারে না।


দেশের যাবতীয় সংস্কারের বৈধতা দেবে রাজনৈতিক দলগুলো এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করবে একটি নির্বাচিত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো সাংবিধানিক বা আইনানুগ এখতিয়ার বা ক্ষমতা নেই। তবে গণ-অভ্যুত্থানোত্তর একটি বিপ্লবী অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে হয়তো সেটির দায়দায়িত্ব বা গুরুত্ব নিঃসন্দেহে একটু বেশি। বিএনপি বা জামায়াতের মতো বড় সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলোর যুক্তি হচ্ছে, অতিদ্রুত জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে তারা প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত করবে। যাতে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে হারানো মূল্যবোধগুলো এ দেশের মাটিতে গভীরভাবে শিকড় গাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও একটি ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তাঁরা ক্ষমতাসীন হলে অন্যান্য দলের সমর্থনে সেসব সংস্কার কর্মসূচি নিয়েও কাজ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলীয় ব্যক্তি পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও অনিয়মের যেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারেক রহমান। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে গেলে হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকতে হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও