জুলাই-আগস্ট গণহত্যার দায় কি সাংবাদিকেরা এড়াতে পারে
জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতার অনেক ভিডিও বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দেখেছি। অনেক ভিডিওতে এমন নিষ্ঠুরতার দৃশ্য আছে যে তা সহ্য করা যায় না। এসব ভিডিও দেখার সময় অনেককেই চোখ ঢাকতে দেখেছি, কাঁদতে দেখেছি। পুলিশের পাশাপাশি দলের গুন্ডারাও শামিল ছিল এসব অপকর্মে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের বর্বরতার একটি প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্যোগে ছবিটি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমেও ছবিটি দেখানো হচ্ছে।
শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে আগে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ঘণ্টা দেড়েক সময়ের মধ্যে কী ঘটেছিল, তার প্রামাণ্য দলিল এ ছবি। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ফুটেজগুলো দীর্ঘ সময় ধরে বিচার–বিশ্লেষণের পর ছবিটি তৈরি করেছে তারা। ছবিতে দেখা গেছে কীভাবে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছে পুলিশ।
দেশের অনেক জায়গাতেই এমন ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনার ভিডিও সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ অনেকেই করছেন নিশ্চয়। জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞ নিয়ে নতুন নতুন আরও প্রামাণ্যচিত্র সামনে আমরা দেখতে পাব আশা করি। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারের জন্যও তথ্যপ্রমাণ হিসেবে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ‘অসংখ্য ডিজিটাল এভিডেন্স’ সংগ্রহ করার কথা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও জানেন, আওয়ামী লীগ সরকার এবং তাদের দলীয় ক্যাডারে পরিণত হওয়া কিছু পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে তাঁরা কত বড় অন্যায় ও অপকর্ম করেছেন। যে কারণে দেশের সব থানা থেকে পুলিশ বাহিনীর লোকজন পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। পুলিশ ও র্যাবপ্রধান সম্প্রতি গণ-অভ্যুত্থানে তাঁদের ভূমিকার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
তবে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মূল দায় যাদের, সেই আওয়ামী লীগ বা তাদের নেতৃত্বের কোনো বোধোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার, দলের লোকজন এবং তাঁদের লুটপাটের সহযোগী বিভিন্ন পেশার অনেকে আটক হয়েছেন। আবার অনেকে দেশে-বিদেশে পালিয়ে আছেন। বিশেষ করে যাঁরা বিদেশে আছেন, তাঁদের কেউ কেউ এখন বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলতে শুরু করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে শত শত মানুষ খুনের জন্য ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, কোনো অনুশোচনার কথাও শোনা যাচ্ছে না। মানুষ খুনের এসব ভিডিও বা তথ্যপ্রমাণ তাঁদের মনে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, কে জানে! তাঁদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা বা মনোবিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভুল, অপকর্ম বা অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাওয়ার নজির নেই। জামায়াতে ইসলামী একাত্তরে তার ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। বোঝা যায়, আওয়ামী লীগও সেই একই পথ ধরেছে। তারা ক্ষমা চাইবে না, নিজেদের অপকর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাবে। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের উদ্যোগ চলছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাঁরা সরাসরি এ গণহত্যায় ভূমিকা রেখেছেন, তাঁরাই সম্ভবত বিচারের আওতায় আসবেন। তবে সেটা কতটুকু ও কোন মাত্রায় নিশ্চিত করা যাবে, তা ভবিষ্যৎই বলবে।