জুলাই অভ্যুত্থান যেসব কারণে পূর্বপরিকল্পিত নয়

প্রথম আলো মোশাহিদা সুলতানা ঋতু প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৭

ভারতীয় গণমাধ্যমসহ দেশে ও দেশের বাইরে কেউ কেউ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ‘কালার রেভল্যুশন’ বলছেন। কালার রেভল্যুশন বলতে সাধারণত সেসব বিপ্লবকেই বোঝানো হয়, যেসব বিপ্লবে সরকারবিরোধী শক্তিগুলো বহিঃশক্তি (বিদেশি অর্থায়নে এনজিও, মিডিয়া, গণতন্ত্র ‘সহায়তাদানকারী’ সংস্থা) দ্বারা প্রভাবিত হয়।


কালার রেভল্যুশন শব্দবন্ধ মূলত সোভিয়েত-উত্তর দেশগুলোর জন্য ব্যবহার করা হয়, যেখানে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে এবং পরবর্তী সময়ে শাসক পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যারা এই রেভল্যুশনগুলোকে কালার রেভল্যুশন বলে মনে করেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে এই রেভল্যুশনগুলোর ক্ষেত্রে শাসক পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। 


ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে আধিপত্য কায়েম করে। হাসিনার শাসনামলে ভারতের শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত হত্যা, ট্রানজিট, পানিবণ্টন, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে আধিপত্যবাদী নীতি চর্চা করেছে, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তা অনিশ্চয়তা ও হুমকির মুখে পড়েছে।


এ কারণেই বাংলাদেশের তরুণদের এই বিজয়কে অবমূল্যায়ন করার অংশ হিসেবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আন্তর্জাতিক প্রভাবকে আন্দোলনের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগও একই বক্তব্য প্রচারে আগ্রহী। কারণ, এর মাধ্যমে তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে অবমূল্যায়ন করা যায় এবং আওয়ামী লীগ সরকার পতনের অভ্যন্তরীণ কার্যকারণগুলোকে আড়াল করে বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলাফল হিসেবে হাজির করা যায়।




  • দেশের মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি, প্রতারণামূলক নির্বাচন ও অর্থনৈতিক সংকটে এমনিতেই বিক্ষুব্ধ ছিল। 

  • সরকারের দমন-পীড়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদ্রাসার অনেক শিক্ষার্থীকে এই সংগ্রামে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল।


অন্যদিকে কিছু বিষয়, যেমন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পরিবারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করা, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এন্ডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির (এনইডি) অর্থায়নে চালিত সুইডেনভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও নিপীড়নের সংবাদ প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ২০২১ সালে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারের একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং এর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ, ঐতিহাসিকভাবে এনজিও তৎপরতার ধারাবাহিকতা, অন্তর্বর্তী সরকারে এনজিও কর্মীদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনকে উপদেষ্টা নিয়োগ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইউনূসের একান্ত সাক্ষাৎ, যুক্তরাষ্ট্রে ইউনূস কর্তৃক একজন ছাত্রনেতাকে আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া—এসব ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের নিদর্শন হিসেবে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ তৈরি করেছে।


কালার রেভল্যুশন যদি বহিঃশক্তির প্রভাবের সমার্থক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানকে কালার রেভল্যুশন বলার পক্ষে ও বিপক্ষে উভয় দিকেই বক্তব্য রয়েছে। তবে সেগুলো কতটা যুক্তিযুক্ত তার বিশ্লেষণ প্রয়োজন। লক্ষণগুলো আসলে কতটুকু পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তিগুলোকে গ্রহণ বা খারিজ করতে সক্ষম, তা নির্ভর করে এগুলো একটি আরেকটির চেয়ে কতটা বেশি গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য, তার ওপর।


এই প্রবন্ধে বেশ কিছু প্রশ্ন চিহ্নিত করে এর উত্তর বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছি কেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে না এবং শুধু বহিঃশক্তি নয়; যেকোনো একক শক্তি যেমন, জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপির পক্ষে এককভাবে এর মূল পরিকল্পনাকারী হওয়া সম্ভব ছিল না। প্রথমেই আন্দোলনের পটভূমি বিশ্লেষণ করে চিহ্নিত করেছি কোন কারণগুলো সংস্কারবাদী কোটা আন্দোলনকে বিদ্রোহে রূপান্তরিত করেছিল, যা দুই মাসের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিকে নিয়ে গিয়েছে। 


দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলন কি আসলেই কোনো মাস্টারমাইন্ড দিয়ে পরিকল্পনা করা সম্ভব কি না এবং এনজিও বা বিদেশি অর্থায়ন কি আসলে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম ছিল কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি। তৃতীয়ত দেখিয়েছি, সশস্ত্র বাহিনী কেন ও কীভাবে আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। চতুর্থত দেখিয়েছি, কোন পর্যায়ে গিয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে জুলাই আন্দোলনকে ‘কালার রেভল্যুশন’, ‘রেভল্যুশন’ না ‘গণ–অভ্যুত্থান’ কোনটা বলা যায় সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও