২০০৭ সালে এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনীতিতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। সে সময় আলোচিত হয়েছিল ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। ‘এই মাইনাস টু’ বলতে বাংলাদেশে রাজনীতির প্রধান দুই দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে বোঝানো হয়। গুজব রয়েছে, ওই মাইনাস টু ফর্মুলা নাকি আদতে ছিল মাইনাস ফোর। বাকি দুজনকে ধরা হয়, দুই নেত্রীর পুত্র তারেক রহমান এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে। যদিও এক-এগারো সরকার কখনো এই সূত্রের বিষয়টি স্বীকার করেনি। তবে গণমাধ্যমসহ নানা আলোচনায় মাইনাস টু ফর্মুলা বেশ সরগরম ছিল তখন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওযার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু সংস্কারের পর আগামী নির্বাচন করার কথা বলেছে। সেই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কমিশন আগামী ১৫ জানুয়ারি সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দেবে। এই সংস্কারের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়টিও রয়েছে। এতে আবার কোনো কোনো মহলে আলোচনায় উঠে এসেছে মাইনাস টু ফর্মুলা। এর একটি সন্দেহজনক কারণ হচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ।
বিগত সরকারের সময়ে তাকে দুর্নীতির মামলায় সাজা দেওয়া হলেও অসুস্থতার কারণে তাকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দেয় সরকার। ওই সময়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে অনেকবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার আবেদন করা হয়। কিন্তু প্রতিটি আবেদনই আওয়ামী লীগ সরকার ফিরিয়ে দিয়েছে। ফলে নানা চেষ্টা-তদবিরেও খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারেননি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর খালেদা জিয়াকে সাজা থেকে মুক্তি দেয়। ফলে এক যুগ পর গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি। যার মাধ্যমে প্রকাশ্য কোনো অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায় ছয় বছরেরও বেশি সময় পর। এছাড়া একটি রাজনৈতিক সমাবেশেও তার যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অসুস্থতার জন্য সেই অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়। এরই ফলে প্রশ্ন আসে, বিগত সরকারের সময়ে খালেদা জিয়াকে এতবার বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিতে চেয়েছিল পরিবার, কিন্তু মুক্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়া বিদেশ যাচ্ছেন না কেন? তবে কি আবারও মাইনাস টু ফর্মুলার ভয় ঢুকেছে বিএনপির নেতৃত্বের মনে? দলের অনেক নেতাকর্মীও আশঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার আগে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তা হলো কই?