বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প খাতের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্প খাত বিশেষ অবদান রাখতে পারে। কারণ বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে শিল্প খাত বিগত কয়েক বছরে দেশীয় রাজস্বভাণ্ডারে কয়েক হাজার কোটি টাকা যুক্ত করেছে। অথচ বাংলাদেশের শিল্পের বয়স কিন্তু বেশি দিন না। সত্যিকার অর্থে এ শিল্প খাত হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়েছে। এ খাত অর্জন করেছে আর্থিক সচ্ছলতা, সুনাম ও ক্ষেত্রবিশেষে স্বনির্ভরতা। এ বিষয়ে একটু পেছন ফিরে দেখা যাক। ১৯৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন হয়, তখন এ দেশে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি প্রস্তুতকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল। বিংশ শতাব্দীর আশির দশক পর্যন্ত এ ধারা বিদ্যমান থাকে। তারপর থেকে ওষুধ শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিকশিত হওয়া শুরু করে। ১৯৮২ সালে ওষুধ নীতি প্রবর্তনের পর এ খাত একটি শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। মূলত আশির দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের বাজারে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আধিপত্য ছিল; যদিও তাদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। দশের নিচে, মাত্র আটটি। অন্যদিকে সেই সময়ে নিবন্ধনকৃত স্বীকৃত দেশীয় প্রস্তুতকারী কোম্পানির সংখ্যা ছিল শতাধিক, ১১৬টি। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই সময় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব পণ্য দিয়ে মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করত। আর দেশীয় কোম্পানিগুলো বাকি ৩০ শতাংশ পূরণ করত।
এদের ঔষধীয় পণ্য কেবল সাধারণ ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ ও পাউডারে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে ওষুধ নীতির সুবাধে এ খাতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যায়। যুক্ত হয় নতুন কিছু শাখা। যেমন হারবাল ও আয়ুর্বেদিক। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৭১টি অ্যালোপ্যাথিক, ২০১টি আয়ুর্বেদিক, ২৭১টি ইউনানি, ৩২টি হারবাল ও ৭৯টি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, ডিসেম্বর-২০২০)। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ সময়ে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের নিবন্ধিত ওষুধ সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৮৬টি এবং তার মধ্যে ৩ হাজার ৬৫৭টি হচ্ছে জেনেরিক। হোমিওপ্যাথিক জাতীয় ওষুধের ধরন সংখ্যা ২ হাজার ৪০০টি, ইউনানি জাতীয় ওষুধের ধরন সংখ্যা ৬ হাজার ৩৮৯টি এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধের ধরন সংখ্যা ৪ হাজার ২৫টি (তথ্যসূত্র: ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর রিপোর্ট-২০১৯)। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ৯৮ শতাংশ দেশীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে জিডিপি বৃদ্ধি করছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ (তথ্যসূত্র: বিআইডিএ, ডিসেম্বর-২০২০)। অভ্যন্তরীণ চাহিদা ২ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার (তথ্য সূত্র: আইকিউবিআইএ-মার্চ ২০২০ ইবিএল গবেষণা) এবং প্রতি বছর বৃদ্ধির হার ২০১৪-১৯ সাল পর্যন্ত ছিল ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। অনুমান করা হয়, অতি শিগগিরই এটি বেড়ে ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে রূপ নেবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ওষুধ শিল্প
- ওষুধ শিল্পের বিকাশ