রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রকৃত অর্থে কার যুদ্ধ

প্রথম আলো প্রতীক বর্ধন প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৫

কোভিডের পর বিশ্বপরিসরে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যে যুদ্ধের কারণে বদলে যাচ্ছে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমীকরণ। সোজাসাপটা বললে, বাংলাদেশে আজ যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, তার গোড়ায় এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়ে যায় এবং পরিণতিতে সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। সংকটের সময় বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ডলারের দর বেড়ে যায়। এ দুটি কারণে যে মূল্যস্ফীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়, যা এখনো ঊর্ধ্বমুখী।


কিন্তু কেন ও কোন পরিপ্রেক্ষিতে এই যুদ্ধ। বাংলা ভাষায় এ বিষয়ে চমৎকার একটি বই লিখেছেন রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক বদরুল আলম খান। ভূরাজনীতি নিয়ে দেশে বাংলা ভাষায় তেমন কোনো বই নেই, যদিও এসব বিষয়ে আমাদের বিদ্ব্যৎ–সমাজের ও সামগ্রিকভাবে মানুষেরও আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। এই বই সেই চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করতে পারবে বলেই বিশ্বাস।


বইটি সম্পর্কে সংক্ষেপে বিবরণ দিতে ফ্ল্যাপের এই কথাগুলো উদ্ধৃত করা যায়: যুক্তরাষ্ট্রের ভূকৌশলগত স্বার্থ মেটানোর অপ্রতিরোধ্য জেদ আর রাশিয়ার শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা নিয়ে হিংসা কীভাবে ইউক্রেনকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে, তার বর্ণনা রয়েছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ: সত্য-মিথ্যার লড়াই বইয়ে।


সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, বিশ্বরাজনীতিতে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আর সেই সুযোগে ন্যাটো নামের আগ্রাসী জোটের সম্প্রসারণ-নীতির উসকানি এই যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। এ বইকে বলা যেতে পারে স্বাধীন দেশ হিসেবে ইউক্রেনের আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ঐতিহাসিক জাতিগত ঐক্যের পটভূমি ও ইউক্রেনকে পশ্চিমা রাজনৈতিক বলয়ে টেনেহিঁচড়ে আনার মার্কিন প্রয়াসের এক অনবদ্য ও বাহুল্যবর্জিত বিবরণ।  



খালি চোখে দেখা যায়, রাশিয়া পার্শ্ববর্তী দেশ ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে নিজের ভূরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করছে। কিন্তু লেখক বদরুল আরব ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্ব থেকে ঘটনা তুলে এনে দেখান, বিষয়টি মোটেও এমন সহজ-সরল ও একপক্ষীয় নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা শক্তিগুলো রাশিয়াকে এই যুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছে। বলা বাহুল্য, ইউক্রেনের মতো ছোট একটি দেশ পশ্চিমাদের সাহায্য-সহায়তা ছাড়া রাশিয়ার মতো পরাশক্তিকে এভাবে ক্রমাগত যুদ্ধের উসকানি দিতে পারে না।


সে কারণে লেখক যথার্থই বলেছেন, বইটির শিরোনাম ‘রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ’ কতটুকু প্রাসঙ্গিক, সে বিষয়ে তাঁর নিজেরই সংশয় আছে। তাঁর নিজের ভাষ্য: ‘শিরোনামটি আমার ধারণায় আরও মানানসই হতো যদি তার নাম দেওয়া যেত ‘রুশ-ন্যাটো’ অথবা ‘রুশ-মার্কিন যুদ্ধ’। কেন এই ধারণা, তার পেছনে অন্তত দুটি কারণ উল্লেখ করতে পারি। প্রথমত, এ যুদ্ধ কখনো শুরু হতো না যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্ররোচিত না করত। দ্বিতীয়ত, এই যুদ্ধে ইউক্রেন সর্বতোভাবে সাহায্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নামের সামরিক সংস্থা থেকে। আমেরিকার ওপর ইউক্রেন আজ এমনভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে তার অর্থনীতি, রাজনীতি, সামরিক সাজসরঞ্জাম সরবরাহ, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, কৌশলগত উপদেশ, এমনকি যুদ্ধ বন্ধ করা নাকি চালিয়ে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রক যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুদ্ধটা প্রকৃত বিচারে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর, আর সেই অর্থে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের।’


এই দৃষ্টিভঙ্গি লেখকের একার নয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের খ্যাতিমান পণ্ডিত যেমন, জন মেরসিমার, ক্রিস হজ বা জেফরি স্যাক্সও এই মত পোষণ করেন বলে লেখক জানিয়েছেন।


লেখক বলছেন, মস্কো যুদ্ধে গেছে তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য সামনে রেখে। সেগুলো হলো ইউক্রেনকে মার্কিন-ইউরোপীয় প্রভাববলয় থেকে মুক্ত করা, ইউক্রেনে রুশভাষী নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষা করা ও ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণে বাধ্য করা। এই তিনটি উদ্দেশ্য রাশিয়া সম্পূর্ণ নয়, আংশিকভাবে পূরণ করতে পেরেছে বলে তাঁর মত। রাশিয়া ইউক্রেনকে ইউরোপ-আমেরিকার প্রভাববলয় থেকে বের করতে পারেনি, বরং ইউক্রেনের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার প্রশ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর ওপর নির্ভরশীল। দেশটির পশ্চিমাঞ্চল রাশিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ ও শত্রুভাবাপন্ন। সেই অনুভূতি যুদ্ধের কারণে আরও তীব্র হয়েছে। রাশিয়া তাদের কাছে আর গ্রহণযোগ্য নয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও