হতাশা-নির্যাতন-বঞ্চনায় বিঘ্নিত রোহিঙ্গা শিশুর ‘মানসিক স্বাস্থ্য’
তিন বছর বয়সে মুখে কথার খই ফুটত শিশু আলেয়ার (ছদ্মনাম)। সাড়ে চার বছর বয়স হতেই হঠাৎ কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। ১৫ বা ১৬ বছর বয়সী ছেলেশিশুদের দেখলেই ভয় পেত, আঁতকে উঠত; কান্না করত আলেয়া। এভাবে কেটে যায় আরও ছয় মাস। উদ্বিগ্ন হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আলেয়াকে নিয়ে মা যান কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই শিশুকে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণ আর কাউন্সেলিং করা হয়। অবশেষে মুখে কথা ফোটে আলেয়ার। উঠে আসে ভয়াবহ এক গোপন নির্যাতনের কথা। কথা বন্ধ করার কারণ, গুরুতর ট্রমায় ভুগছিল শিশুটি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যেটি ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) বা মানসিক আঘাত-পরবর্তী পীড়নমূলক মনোবিকৃতি’ হিসেবে পরিচিত। শ্রমজীবী বাবা ও দোকানি মায়ের অনুপস্থিতিতে প্রতিবেশীর হাতে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছিল শিশুটি।
আলেয়াকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। মাকেও কাউন্সেলিং করেন ওসিসির মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট (এমএইচপিএসএস) কাউন্সিলর। গত জুন-জুলাইয়ে টানা কয়েকটি পর্বের কাউন্সেলিংয়ে শুধু মা নন, আলেয়ার মুখেও ফোটে হাসি। যে হাসি মিইয়ে গিয়েছিল গোপন নির্যাতন আর পরিবারের অবহেলায়।
ওসিসি সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেক শিশু এখানে আসছে। যাদের বেশির ভাগ নির্যাতন, ধর্ষণ, সহিংসতার শিকার হয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য হলো এমন এক অবস্থা যা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতাকে বোঝায়। একজন ব্যক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ হলেই সম্পূর্ণ সুস্থ নয়, তার মন-মানসিকতা যেমন সুস্থ হতে হবে, তেমনি সুস্থ সামাজিক অবস্থাও জরুরি।