পুঁজিবাজারের জন্য সুন্দর ভবিষ্যতের অপেক্ষায়
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নতুন কর্তাব্যক্তি এসেছেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কিছু নতুন সদস্যও। তাঁদের আগমনে এবং এযাবৎ গৃহীত কিছু সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনায় অংশীজন, এমনকি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
নতুন চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে পুঁজিবাজারে আরও মেধাবীদের আকর্ষণ, স্বাধীন পরিচালকদের ভূমিকা বৃদ্ধি, জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে—এমন বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক, দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, বাজারে দৈনিক লেনদেন বাড়ানোসহ আরও কিছু সংস্কারের কথা বলেছেন।
আমি প্রায় ১০ বছর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মনোনীত পরিচালক ছিলাম। কাজ করেছি পুঁজিবাজারের নিবন্ধিত ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স আর মার্চেন্ট ব্যাংকের বোর্ডের সঙ্গে। তার আগে অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ততার পাশাপাশি গ্রামীণফোনের আইপিও কাজে আমার ও আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাজ করার অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের বিষয়টি একটি বড় অর্জন এবং আমার মতে, সেই কাজগুলো পুঁজিবাজারের উন্নয়নে দিকনির্দেশনামূলক ছিল।
গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তির আলোচনাটি শুরু হয় সম্ভবত ২০০৪ সালের শেষ নাগাদ। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে নরওয়ের অসলোয় গ্রামীণফোনের মালিকানা প্রতিষ্ঠান টেলিনরের প্রধান কার্যালয়ে তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ব্যক্তি এবং এশীয় বিভাগের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি।
আমরা প্রথমত চেষ্টা করছিলাম, গ্রামীণফোনের সাফল্যকে যদি বাজারে বিকোতে হয়, তাহলে হয়তো তাঁরা বাংলাদেশের ঢাকার সঙ্গে সঙ্গে যুগপৎভাবে লন্ডনে কিংবা সিঙ্গাপুরে, এমনকি নিউইয়র্কের শেয়ারবাজারে গ্রামীণফোনকে যৌথ তালিকাভুক্তি করার কথা ভাবতে পারেন।
এটি ছিল অত্যন্ত একটি দুরূহ কাজ। বাংলাদেশে এর আগে এত বড় কোনো শেয়ার (প্রায় ১০০০ কোটি টাকা) কখনো তালিকাভুক্তি হয়নি। আমরা সংগত কারণেই ধারণা করেছিলাম, গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে আমরা অত্যন্ত সজাগ ছিলাম, যাতে একে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি না হতে পারে।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা গ্রামীণফোনের শেয়ার কি ১ টাকা অভিহিত মূল্যে, না ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে, নাকি ১০০ টাকা মূল্যে বাজারে তালিকাভুক্ত করব।
তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি ছিল গ্রামীণফোনের শেয়ারের প্রাইস ডিসকভারি কিংবা গ্রামীণফোনের ভ্যালুয়েশন। চতুর্থ চ্যালেঞ্জ, মূলত গ্রামীণফোনের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে গ্রামীণফোন যদি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে কি না কিংবা সরকারের করহারে কোনো ধরনের অব্যাহতি দেওয়া হবে কি না কিংবা করহার কমিয়ে আনা হবে কি না।
পঞ্চমত চ্যালেঞ্জ, সব ধরনের ব্যক্তিস্বার্থের ওপরে থেকে, গোষ্ঠীস্বার্থের বাইরে থেকে গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তিকে বিবেচনায় আনা। এবং ষষ্ঠ চ্যালেঞ্জ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ব্রোকার কিংবা ব্যক্তিদের কোনো সুযোগ-সুবিধার বিবেচনায় না নিয়ে আমরা কীভাবে গ্রামীণফোনের শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত করতে পারি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পুঁজিবাজার
- বিনিয়োগকারী
- নিয়ন্ত্রক