বড় প্রকল্পের আয়ে উঠছে না পরিচালন ব্যয় ভর্তুকি দিয়ে কিস্তি শোধ
কক্সবাজারে নতুন রেলপথ, ঢাকায় মেট্রোরেল, চট্টগ্রামে টানেল ও পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথ চালু হয়েছে গত দুই বছরে। দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের মেগা এ চার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের টাকায়। চালুর পর প্রকল্পগুলোর আয়-ব্যয়ের যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, আয় দিয়ে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ই উঠছে না। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে ঋণ পরিশোধ ব্যয়। চার প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সুদ ছাড়া বার্ষিক গড় কিস্তি দিতে হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় ঋণ পরিশোধে সরকারকে দিতে হচ্ছে ভর্তুকি।
যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবার আগে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের, ২০২২ সাল থেকে। প্রকল্পটির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিয়েছে ৯ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, এ দায় পরিশোধ করতে হবে ২০ বছরে। এ হিসাবে বার্ষিক গড় কিস্তির পরিমাণ ৪৫৫ কোটি টাকা। এডিবি ঋণ দিয়েছে তিন ধাপে। চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ৪২০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে বার্ষিক। ২০২৮ সালে তা ৬৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। এর সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে ২ শতাংশ সুদও। প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শেষ হবে ২০৪৮ সালে।
বিপুল পরিমাণ ঋণের বিপরীতে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে তিনটি ট্রেন পরিচালনা করে ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭১ কোটি টাকার মতো আয় করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ আয় দিয়ে রেলের পরিচালন ব্যয়ই ঠিকমতো উঠে আসছে না। ফলে প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে।
ভবিষ্যতে দোহাজারী-কক্সবাজারের এ রেলপথটি লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম এবং এরই মধ্যে প্রকল্পের জন্য গৃহীত ঋণ দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেল কখনই ভালো প্রকল্প ছিল না। কারণ রেলপথটি আন্ডার ইউটিলাইজড থাকার শঙ্কা রয়েছে। ভবিষ্যতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে তখন কিছু পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তারপরও রেলপথটি অর্থনৈতিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখি না। বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে নির্মিত রেলপথটি বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আয় দিয়ে কখনই ঋণ পরিশোধ সম্ভব হবে না।’