আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব: দেশের নির্বাচনব্যবস্থায় প্রয়োগ করা কি সম্ভব

প্রথম আলো ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৫১

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন বিষয়ে বাম, ডান ও মধ্যপন্থীদের বিভিন্ন আলোচনায় বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে বিষয়টির প্রায়োগিক জ্ঞান অত্যন্ত কম। মূলত ফেডারেল বা প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা না থাকলে, অর্থাৎ স্বাধীন স্থানীয় সরকার ছাড়া আনুপাতিক বা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন বা প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) ব্যবস্থা কাজ করে না। এ আলোচনা শতভাগ অনুপস্থিত। ইউরোপের প্রতিটি দেশে যারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন বাস্তবায়ন করেছে, তাদের স্বাধীন, সক্ষম ও শক্তিশালী স্থানীয় ও নগর সরকার—উভয়ই আছে।


আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) হচ্ছে ‘সেন্ট্রাল রিপ্রেজেন্টেশন’ বা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিত্ব। আপনাকে লোকাল রিপ্রেজেন্টেটিভ বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তৈরি করা লাগবে নাগরিকের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে। এটা ইউনিয়ন ও উপজেলা শক্তিশালী করে হবে না। বরং এমন স্থানীয় সরকার লাগবে, যা তার বাজেট নিজে তৈরি করতে পারবে; যাদের কর বা রাজস্বকাঠামো আছে; স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুলিশ, বিচারসহ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো রাষ্ট্রের সব ধরনের নাগরিক সেবা নিজে স্বাধীনভাবে দেবে এবং সেবা ব্যবস্থাপনার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। কেন্দ্র এখানে শুধু কোয়ালিটি মনিটরিং করবে এবং রেগুলেটরি গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কাঠামো ফেসিলেটেট করবে।


বাংলাদেশে আসলে কোনো স্থানীয় সরকার নেই। দেশের সংসদ নির্বাচনী আসনের ভোটাররা কনস্টিটুয়েন্সির এমপিকে রাষ্ট্রের আইন করার জন্য ভোট দেন না, মূলত ভোট দেন তাঁকে সার্ভ করার জন্য। বোঝাপড়াটা এখানেই চাই।


স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবন, অর্থনীতি ও অবকাঠামোর মৌলিক সেবাদান ও সামাজিক নিরাপত্তার সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম স্থানীয় সরকার গড়তে পারলেই তখন কেন্দ্রের জন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন প্রাসঙ্গিক হবে, এর আগে নয়। কেননা, আনুপাতিক নির্বাচনের জেতা সংসদ সদস্যের ভিন্ন এলাকার মানুষকে সার্ভ করার দায় তৈরি হয় না, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর সে জ্ঞান, লেজিটিম্যাসি ও এখতিয়ারও থাকে না। কারণ, তিনি স্থানীয় মানুষের প্রতিনিধি নন।



সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। তবে আনুপাতিক পদ্ধতির দুটি মডেল আছে। আধুনিক মডেলে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করে ব্যালটভুক্ত করা হয়। পুরোনো ও অপরিপক্ব মডেলে দলকে ম্যান্ডেট দেওয়া হয়। আমাদের এখানে রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে শুধু দলের নাম ও প্রতীকের ভিত্তিতে ভোট এবং প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে ভাগে পড়া আসনগুলোয় দলীয় প্রধান বা দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচন।


পিআর নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়েও আমাদের অজ্ঞানতা কিংবা শঠতা আছে। তারা বলছে, এ ব্যবস্থায় ভোটার ব্যক্তিপ্রার্থীকে নয়, বরং দলকে ভোট দেন। এটা ইমম্যাচিউর পিআর ধারণা। আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার পরিপক্ব হয়েছে বিগত কয়েক দশকে। নেদারল্যান্ডসের ভোটার শুধু দলকে নয়, বরং সারা দেশের সব দলের সব প্রার্থীর মধ্যে দলের প্যানেলের (দলের নামের নিচে প্রার্থীদের নাম থাকে ব্যালটে) শুধু একজন প্রার্থীকে ভোট দেন। একটি দলের সব প্রার্থীর প্রাপ্ত মোট জাতীয় ভোটের শতাংশের বিপরীতে ওই দলের সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীরা মনোনীত হন। এর মাধ্যমে দলের বা দলীয় প্রধানের স্বৈরতন্ত্র প্রতিহত করা হয়। দলকে ভোট দিলে দল বা তার প্রধান একক সিদ্ধান্তে সব সংসদ সদস্য নির্বাচন করে বিপর্যয় তৈরির বহু উদাহরণ বিশ্বে রয়েছে। অপরিপক্ব সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার দেশগুলো তাই পিআর নিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিপদে আছে।


পিআর-ব্যবস্থায় স্থানীয় কোনো আসন থাকে না। এক ব্যক্তি সারা দেশের একজনকে মাত্র ভোট দেন। দলের ভেতর যাঁরা সর্বোচ্চ ভোট পান, তাঁরা দলের প্রাপ্ত শতাংশের মধ্যে সিলেক্টেড হন।


এ ধরনের ব্যবস্থায় আপনি নিম্নকক্ষে বাংলাদেশের সংসদের মতো ৩০০ আসন রাখতে পারবেন না। এতে ব্যালট পেপারে আসনসংখ্যার আনুমানিক দ্বিগুণ প্রার্থীর তালিকা থাকবে, যা থেকে সারা দেশের সব ভোটার মাত্র একজনকে ভোট দিতে পারবেন। ভোটার একাধিক ব্যক্তিকে ভোট দিলে তা বাতিল হবে। এমন ব্যালট ছোটখাটো পুস্তিকার রূপ নেয়। টিভিতে যখন ইউরোপের ভোট দেখানো হয়, দেখবেন, পুস্তিকার মতো মোটাসোটা ব্যালট পেপার ফেলা বাক্সে হয়। বাংলাদেশে এ রকম ব্যালট প্রবর্তন করা অসম্ভব। প্রথমত লজিস্টিক ঝামেলা। দ্বিতীয়ত, এটা ভোটারদের ব্যবহারবান্ধব এবং তৃতীয়ত, সচেতনতা, পিআর লিটারেসি না থাকা। অর্থাৎ আমাদের পিআর আনতে গেলে নিম্নকক্ষের আসন কমাতে হবে প্রায় অর্ধেক।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও