You have reached your daily news limit

Please log in to continue


হুমকিতন্ত্রের বিস্তার

হুমকি শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে হুংকার, তর্জন, ধমক, ভয়প্রদর্শন। কাউকে শাস্তি দেওয়া বা ক্ষতি করার জন্য ভয় দেখানো। এখন দেশজুড়ে চলছে নানা ধরনের হুমকি। অনেকে একে বলছেন হুমকিতন্ত্র। দেখে নেওয়ার হুমকি। কথামতো চলার হুমকি। শেষ করে দেওয়ার হুমকি। ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’— হুমকি। ‘আপনার সব কিছু জানি’— এই হুমকি।

এতকাল আমরা সংস্কৃতি বলতে বুঝতাম শিল্প, গানবাজনা, চিত্রকলা থেকে সিনেমা, নাট্যচর্চা। এখন সংস্কৃতির ওই মানেটাই পালটে যাওয়ার অবস্থা। সিন্ডিকেট সংস্কৃতি, মাফিয়া সংস্কৃতি, চাঁদাবাজি সংস্কৃতি, কমিশন সংস্কৃতি– ছিল, আছে এবং বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মাঠ গরম করা ‘হুমকি সংস্কৃতি’ প্রধান হয়ে উঠেছে, হুমকিতন্ত্রের ব্যাপক বিস্তার ঘটছে।

এই ভয় দেখানোর সংস্কৃতি বা হুমকির সংস্কৃতি অবশ্য আমাদের দেশে নতুন নয়। সেই দশম-দ্বাদশ শতাব্দী চর্যাপদের যুগেও তার চিহ্ন দেখি। সেনযুগে ব্রাহ্মণ্য সম্প্রদায়ের হাতে বৌদ্ধ সহজিয়া সম্প্রদায়কে শুধু হুমকি নয়, হেনস্থাও সইতে হয়েছিল। সে কারণে তারা ছদ্মনামে পদ রচনা করেছেন। সেনযুগের শেষ লগ্নে তুর্কি আক্রমণ ঘটে যাওয়ার পর স্থানীয়দের ধর্মান্তরিত হতে হয়। অন্ত্যজদের কেউ কেউ হয়তো স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছে, বাধ্যও হয়েছে বহুজন। মধ্যযুগ জুড়ে শাসকের শাসানিতে বাকস্বাধীনতা হারিয়েছিল সাধারণ মানুষ। ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে লোভাতুর ভাঁড়ু দত্তকে আমরা দেখেছি। আর ওই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে— শাসকের কথা, নব্য শাসকের আস্ফালন। এই ছত্রছায়ায় যারা থাকে, তারাও হুমকি প্রদর্শনে কম যায় না। হুমকিতে মাথা নত না করলে ডেকে পাঠানো, বাড়ির সদস্যদের রাস্তাঘাটে নাকাল করা এখন দৈনন্দিন ঘটনা। বিচার-সালিশের নামে ভীতি প্রদর্শন আর শারীরিক নির্যাতন চলছে। মেরে ফেলাও হচ্ছে। এমনকি ঘরের মেয়ে-মায়েদেরও এর থেকে পরিত্রাণ নেই। ক্ষমতার অশ্লীল আস্ফালন সর্বত্র।

‘তুই চিনস আমারে?’— এটি এ দেশের একটি বহুল প্রচারিত ও প্রচলিত সংলাপ। সম্ভবত হুমকির সবচেয়ে জনপ্রিয় সংলাপ। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই কখনো না কখনো এই সংলাপ হয় আউড়েছে, নয় শুনেছে। যদিও ‘আমারে’ চেনা সহজ কাজ নয়। শত সহস্র মানুষের ভিড়ে কে যে ‘শেরে বাংলা’ আর কে যে ‘কুদ্দুস পাগলা’— সেটা বোঝা কঠিন কাজ। কিন্তু যখনই কেউ চিৎকার করে বলে যে, ‘তুই চিনস আমারে’? তখনই বুঝতে হবে, আপনি কোনো একজন ক্ষমতাবানের সামনে পড়েছেন। আপনার উপস্থিতি বা আচরণে কোনো একটা বেয়াদবি বা ভুল বের হয়েছে।

হুমকিকে হাতিয়ার করেছে যুগে যুগে ক্ষমতাসীন শাসক। কিন্তু শাসক তো চিরন্তন নয়। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় ধরা পড়ে ওই সত্য— “রাজা আসে যায় আসে আর যায়/ শুধু পোষাকের রং বদলায়/ শুধু মুখোশের ঢং বদলায়।” আমাদের এই অঞ্চলে আবার সবাই রাজা হতে চায়। দাপট দেখাতে চায়। বশ্যতা বা আনুগত্য চায়। ক্ষমতা দেখাতে চায়। ক্ষমতা একটি অত্যন্ত লোভনীয় জিনিস। যার স্বাদ নিতে সবাই উদগ্রীব থাকে। অন্যকে অধস্তন বানানোই হচ্ছে ক্ষমতার আসল মাহাত্ম্য। তাই তো নিজের মনমতো কিছু না হলেই ক্ষমতার গর্বে গর্বিত ব্যক্তিরা হুংকার ছাড়ে, ‘তুই চিনস আমারে? একদম খায়া ফালামু। শেষ কইরা দিমু!’

মজার ব্যাপার হলো, ‘ওয়ান টু ওয়ান’ যখন ক্ষমতা বা দাপট দেখানোর প্রয়োজন হয়, তখন কেন জানি সবাই ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলে, ঢাকার আদি ভাষা নয় কিন্তু, হালআমলে টেলিভিশন নাটক ঢাকার যে ভাষাটা তৈরি করেছে, সেই রকম একটা জগাখিচুড়ি ভাষা ব্যবহার করে থাকে। আপাত শান্ত, ভদ্র, লেখাপড়া জানা লোকের মুখ থেকে তখন— ‘খাইছি তোরে’, ‘চিনস আমারে’, ‘বাপের নাম ভুলাইয়া দিমু’, ‘হাড্ডি ভাঙ্গা দিমু’, ‘টেংরি ফাটায়া দিমু’— এমন সব বাণী বের হয়ে আসে।

ভয় দেখানোর সংস্কৃতি, হুমকি প্রথা— যে নামেই তাকে ডাকা হোক না কেন, মানুষের ন্যায্য অধিকারকে খারিজ করার এক মোক্ষম হাতিয়ার এটি। জনপ্রশাসন বিভাগের গণ্ডি পেরিয়ে তার কালো হাত পৌঁছেছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে বিনোদন সর্বত্র।

যেখানেই একচেটিয়া ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হয়, সেখানেই দেখা যায় ক্ষমতার সীমাহীন আস্ফালন। সেটাই হুমকি সংস্কৃতির উৎপত্তিস্থল। বলবানরা দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে। যুগে যুগে এটাই হয়ে এসেছে। এখনও হচ্ছে। তবে এই বলবানরা নিজেদের শক্তিতে নয়, ক্ষমতাসীনদের শক্তিতে, কোনো খুঁটির জোরেই বলবান। অনেক ক্ষেত্রে থাকে কোনো এক গডফাদার বা বড়ভাইয়ের আশীর্বাদ। এই বড়ভাইদের অসীম ক্ষমতা, বিপুল প্রভাব। সবকিছু কন্ট্রোল করে এরাই। সবাই এদের প্রতাপের সামনে নতজানু। সবাই এদের মন জুগিয়ে চলে। না হলেই বিপদ। তাদের কপালে আছে বিরাট দুর্গতি। তাদের টাকা না দিলে বিল্ডিং ওঠে না। মেরামতি কাজ হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় না। লাইসেন্স-পারমিট পাওয়া যায় না। চাকরি, প্রমাশন— এগুলোও হয় না। লবিং এবং আশীর্বাদ না থাকলে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল-ব্যারিস্টারেরও পেশাগত রেজিস্ট্রেশন মিলবে না। ভালো যোগাযোগ না থাকলে কে যে কখন কোথায় ছিটকে যাবে কেউ জানে না। সবসময় তটস্থ থাকতে হয় সবাইকে।

এদেরও মাথা আছে। বড় মাথা অল্প কিছু। বাদবাকি মাঝারি ছোট বা পাতি মাথা। তাদের সমঝে না চললেই কপালে শনি। এর সঙ্গে রয়েছে বিপুল দুর্নীতি। কেনাকাটার টেন্ডার থেকে শুরু করে বর্জ্য পাচার, মেরামতি থেকে লোক নিয়োগ সব জায়গাতেই তাদেরই দাপট, বাহাদুরি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন