আমরা কি একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছি?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন।’ তাছাড়া তিনি নিজেও একসময় ছাত্রলীগ করতেন এবং সেই সুবাদে তিনি অমর একুশে হল কমিটির নেতৃত্বেও ছিলেন। অতঃপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে তিনি আজকের অবস্থানে এসেছেন। তার এ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য।
কারণ, সময়ের প্রয়োজনে তিনি যথাযথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। দেশের মানুষের স্বার্থে নিজের জীবনবাজি রেখে রাজপথে নেমে তিনি প্রমাণ করেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সংগত। আর শুধু তিনি কেন, আরও এমন অনেককে জানি ও চিনি, যিনি বা যারা একসময় ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ করতেন, তাদের কেউ কেউ বিগত সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনাসহ শেষদিকে সরকারি দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তাদের সেসব সমালোচনা, বিরোধিতা সরকারের উচ্চমহলে পৌঁছেনি বা তাদের কথায় কেউ কর্ণপাত করেননি।
কারণ, সরকারের সর্বোচ্চ পদ থেকেই বলে দেওয়া হয়েছিল, কে কী বলল না বলল, লিখল না লিখল, তাতে কিছু যায়-আসে না! সুতরাং, সারজিস আলমদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো গত্যন্তর ছিল না; আর সেই সঙ্গে বিবেকবান আরও অনেক ছাত্রলীগ, আওয়ামী নেতাকর্মীও বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন প্রদান করেছিলেন। যেমন আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক এক ব্যক্তিকে সেদিন রাস্তায় নেমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেছিলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে না, তারা লুটপাট করে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে, তাই এখনো এ সরকারের পতন না ঘটলে দেশের আরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আবার কানাডাপ্রবাসী সাবেক একজন ছাত্রলীগ নেতা সেসময় ছুটি কাটাতে দেশে এসে ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগদান করায় তাকে জিজ্ঞাসা করেও একই ধরনের জবাব পেয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বারবার ব্যর্থ হওয়ায় তিনিও রাস্তায় নেমেছেন। বিশেষ করে ’১৮ ও ’২৪-এর নির্বাচনি ফলাফল তিনি মেনে নিতে পারেননি।