প্রবীণ নদীকর্মীর ছেঁড়া পাঞ্জাবি ও দখলদারপন্থী প্রশাসন

প্রথম আলো রাজারহাট তুহিন ওয়াদুদ প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৪১

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাটে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অবৈধ দখলদারদের স্থাপনার কারণে চাকিরপশার নদের পানি নেমে যেতে না পারায় এই জলাবদ্ধতা। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সম্প্রতি জলাবদ্ধতার অবস্থা দেখতে এসেছিলেন কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা।


কীভাবে, কতটুকু দখল হয়েছে, তার দাগ নম্বরসহ বলতে পারেন নজির হোসেন। তিনি প্রামাণ্য কাগজপত্র নিয়ে এসেছিলেন। ৮৭ বছর বয়স তাঁর। তিনি অত্যন্ত গরিব। চাকিরপশার নদ আন্দোলনে তিনি সারা জীবনে লাখখানেক টাকা ব্যয় করেছেন। তাঁর নামে অনেক মামলাও হয়েছে। এখনো মামলা চলমান। চাকিরপশার কীভাবে প্রভাবশালীরা লুট করেছে, তিনি তা জানেন। এই বয়সে ঠিকমতো কানেও শোনেন না।


সেই নদী–অন্তঃপ্রাণ নজির হোসেনকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তার সামনে টানাহেঁচড়া করে, মেরে, পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দিয়ে হাত থেকে টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়েছে অবৈধ দখলদার। নদীতে ডোবানোর হুমকিও দিয়েছে তারা।


জনসম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করার পর আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হওয়া, প্রশাসনের আনুকূল্য লাভ করা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটা আছে কি না, তা জানা নেই।


প্রবীণ নজির হোসেন দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। দুই বছর ধরে তাঁর বড় ইচ্ছা, তিনি রিজওয়ানা হাসানকে একবার বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়াবেন। এমন সহজ–সরল লোকটি যখন স্বপ্ন দেখছিলেন নদ উদ্ধারের, ঠিক তখনই তাঁকে যেভাবে লাঞ্ছিত করা হলো, তা আমাদের সামষ্টিক লজ্জার।



এই লজ্জা কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে স্পর্শ করে কি না, জানি না। ছেঁড়া পাঞ্জাবিতে তাঁর দাঁড়িয়ে থাকার ছবি আর তাঁকে টানাহেঁচড়া করার বর্ণনা শুনে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। নজির হোসেন ভাইয়ের কাছে আমাদের মাফ চাওয়া ছাড়া আর কী করার আছে!


কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন যদি দায়িত্বশীল হতো, তাহলে চাকিরপশার নদের এক ইঞ্চি জায়গাও বেদখল হতো না। এমনকি তারা যদি উদ্ধারে সচেষ্ট হতো, তাহলেও এমন ঘটনা ঘটত না।


মার খাওয়া, মামলার শিকার হওয়া আর নানান ধরনের হুমকি পাওয়া চাকিরপশার নদ সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে আমার নামেও দুটি মামলা আছে। আহ্বায়ক, সদস্যদের নামেও অনেক মামলা। চাকিরপশারের অবৈধ দখলদারেরা আমাকে রাজারহাট উপজেলায় অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করেছে। এ যদি হয় পরিস্থিতি, তাহলে কীভাবে নদী টিকবে? নদীকে ঘিরে কৃষিভিত্তিক সমাজ কীভাবে টিকবে? পরিবেশ–প্রাণ–প্রকৃতি টিকবে কীভাবে?


আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কালে দখলদারেরা নিজেদের পরিচয় দিতেন আওয়ামী লীগের নেতা। তখন তাঁরা আন্দোলনকারীদের জামায়াত-বিএনপি বলে সংবাদ সম্মেলন-মানববন্ধন করতেন। বর্তমানে একই দখলদারেরা আন্দোলনকারীদের আওয়ামী লীগ বলে মানববন্ধন করছেন। আন্দোলনকারীদের সরকারবিরোধী প্রমাণ করাই তাঁদের চেষ্টা।


একজন নব্য দখলদার জুটেছে। তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকার মালিক। পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হয় না। আন্দোলনকারীদের নামে হেন অপবাদ নেই, যা ওই পত্রিকা লিখছে না। এত কিছুর মধ্যেও থেমে নেই আন্দোলন।


উচ্চ আদালতের কিংবা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের অবৈধ দখল উচ্ছেদের নির্দেশনা আমলেই নিচ্ছে না কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন। গত ছয় বছরে আন্দোলন চলাকালে তিনজন জেলা প্রশাসক, রাজারহাট উপজেলার জনা ছয় ইউএনও, এর চেয়ে বেশি এসি ল্যান্ড বদলি হয়েছেন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কয়েকজন চেয়ারম্যানও বদল হয়েছেন। কেবল এডিসি উত্তম কুমার তিন ডিসির আমলে বহাল আছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও