বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ হওয়া দরকার
গত ১৫ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগ ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে বাসা থেকে বের হয়ে আমার সহকর্মী ও জীববিজ্ঞান অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তারকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দিয়ে পদার্থ ও রসায়ন বিভাগের ভবনের কাছে যাই। এরপর ছাত্রদের কাছ থেকে জানতে পারি, ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা পরিবেশ বিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সামনে ছাত্রীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তখন আমরা কিছুটা বিচলিত হয়েছিলাম। তার পরও তাদের উদ্ধারের জন্য সেখানে যাই। আমরা সেখানে যাওয়ার আগেই তারা অবরোধমুক্ত হয়েছিল। তবে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে আটকে পড়া তিন ছাত্রকে উদ্ধার করে মেডিকেল সেন্টারে পাঠিয়ে সেখান থেকে চলে আসি। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে তারা অবস্থান নেন।
সেখানে ধীরে ধীরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমতে থাকে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে জানতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে ছাত্রলীগের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা পিকআপের মাধ্যমে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করছে। ক্যাম্পাসে কর্মরত এক সাংবাদিকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রক্ষার আবেদন ও আকুতি জানতে পারি। এদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর আসে যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর পার হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ওই সাংবাদিকের মাধ্যমে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের জানাই যদি আক্রমণ হয়, তাহলে তারা যেন উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেয়।
যেহেতু আক্রমণকারীরা ছাত্রলীগের ভারাটে ও বহিরাগত সেহেতু তাদের আক্রমণে শিক্ষার্থীদের অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল, এমনকি বড় ক্ষতিও হতে পারত। এরপর আমি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান করি এবং শিক্ষার্থীদের রক্ষায় ফোনে ও খুদে বার্তায় অন্য শিক্ষকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে আশ্রয় গ্রহণ করলেও সন্ত্রাসীরা বাসভনের দুটি গেট ভেঙে আক্রমণের জন্য উদ্ধত হয়েছিল। বাসভবনের ভেতরে পেট্রলবোমাও নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অতিথি কক্ষে আশ্রয় নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু অতিথি কক্ষে তৎকালীন উপাচার্য, প্রক্টরসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা থাকা সত্ত্বেও সেখানে শিক্ষার্থীদের আশ্রয় দেয়া হয়নি। নিরাপদ আশ্রয় না দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরং এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল। বাসভবনের দুটি প্রবেশপথে পুলিশ অবস্থান করলেও তাদের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসী বাহিনী উপর্যুপরি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করতে থাকে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনীতি লেজুড়বৃত্তি