ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: যুদ্ধ, শক্তিপরীক্ষা নাকি স্বার্থরক্ষা

ডেইলি স্টার শুভ কিবরিয়া প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২২:৪১

ইরান হামলা করেছে খোদ ইসরায়েলের ভূখণ্ডেই। একের পর এক মিসাইল হামলা হয়েছে ইরানের তরফে। যদিও এসব মিসাইল হামলা প্রতিহত করেছে ইসরায়েল তার ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী স্থাপনা দিয়ে। কিন্তু এই হামলা গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তৈরি করেছে এক যুদ্ধাবস্থা। তৈরি হয়েছে উত্তেজনা ও আতঙ্ক।


গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা, লেবাননে ইসরায়েলি বর্বর আক্রমণের প্রত্যুত্তর হিসেবে এই হামলা পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যায়, সেটা অজানা। কেননা ইরানি হামলার পরপরই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরান এই হামলা করে ঠিক কাজ করেনি। এর ফল ভুগতে হবে তাদের। এই হামলার নিন্দা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়া হবে। আমেরিকা সৈন্য দিয়ে সাহায্য করবে ইসরায়েলকে।


অন্যদিকে নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারির পর ইরানের বক্তব্য হচ্ছে, ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নিলে পাল্টা হামলা চালানো হবে। উল্লেখ্য, গত ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে হিজবুল্লার সদর দপ্তরে ইসরায়েলি বিমানহামলায় নিহত হন ইরানের সমর্থনপুষ্ট শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লার প্রধান হাসান নসরুল্লা।


এখন এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, অর্থনীতিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করবে। চলমান মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির রূপান্তর প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে। প্রভাব পড়বে জ্বালানি তেলের মূল্যের ওপরও। সবচাইতে বড় কথা এই উত্তেজনা দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের রূপ লাভ করে কি না, সেই আশঙ্কাও থাকছে। এই পরিস্থিতি বিশ্বরাজনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি করে কি না, সেই শঙ্কাও থাকছে।



এই অবস্থা কেন হলো? আদৌ কি এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলবে? নাকি গুরুতর সংকটের দিকেই হাঁটছে বিশ্ব?


বিপদের আওয়াজ


ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারির ভাষায় ইসরায়েল ইরানের আক্রমণের বিরুদ্ধে সময়মতো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত এবং এটি সময়মতোই ঘটবে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, এই হামলার জন্য ইরানের পরিণতি গুরুতর হবে। সেটা নিশ্চিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করবে। ইরান ইসরায়েলকে জানিয়েছে এই হামলার প্রতিশোধ নিলে তারও কড়া জবাব দেওয়া হবে। ইসরায়েলকে তাহলে আরও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে পড়তে হবে।


অনেকের আশঙ্কা মধ্যপ্রাচ্য এখন পূর্ণ মাত্রার আঞ্চলিক যুদ্ধের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এর পরিবর্তন ঘটতে পারে তখনই যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলঘনিষ্ঠ আমেরিকান নীতির পরিবর্তন ঘটবে। ইসরাইলঘনিষ্ঠ আমেরিকান নীতির পরিবর্তন ছাড়া এই সংঘাত শেষ হবে না। ইসরায়েলে আমেরিকা অস্ত্র না পাঠালে, ইসরায়েলি অপরাধে তহবিল ও সহায়তা না করলেই এই সংঘাতের অবসান ঘটতে পারে।


অনেকের আশঙ্কা ইসরাইল এই হামলার প্রতিশোধ নেবেই। ইরানও বসে থাকবে না। হামলা-পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এক বৃহত্তর যুদ্ধের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।


ইসরাইল গত কয়েক মাস ধরে তার নারকীয় সামরিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক শক্তিমত্তা ব্যাপক ধ্বংস করতে সক্ষম, সেটার প্রমাণ তারা লেবাননে দেখিয়েছে। তাদের বিশাল গোয়েন্দা কৃতিত্বও তারা প্রমাণ করেছে। ব্যাপক ধংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি যে তারা ঘটাতে পারে সেটা লেবানন ও ইরানের অভ্যন্তরে হামলা করে তারা দেখিয়েছে। ইসরায়েলি পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়তে হতে পারে ইরানকে, সেই আশঙ্কার কথাও শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে।


কেন এই হামলা


ইরান ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলে যেসব মিসাইল মেরেছে ইরান, তার বেশিরভাগই আমেরিকার সেনাদের সহায়তায় ইসরায়েলের অ্যান্টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা প্রতিহত করেছে। ফলে এই হামলার রাজনৈতিক গুরুত্ব যতটা বেশি, ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় ততটা কার্যকর নয়। ইরান হামলা করেছে ইসরায়েলে এটা শুনতে যত বিপদজনক মনে হয়, বাস্তবে এর ধ্বংসের কার্যকারিতা তেমন একটা নেই বললেই চলে। তবে কেন ইরান এরকম পদক্ষেপ নিল। সম্ভাব্য কারণগুলো এরকম—


১। ইরান পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটা প্রক্সি ওয়ার বা ছায়া যুদ্ধ জারি রেখেছে। গাজায় হামাস ও আল জিহাদ, লেবাননে হিজবুল্লাহ, সিরিয়ায় সিরিয়ান আর্মি, ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীরা ইরানের সামরিক, আর্থিক, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জানপ্রাণ দেওয়া লড়াইয়ে অংশ নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল এসব সংগঠনের ওপরে হামলা চালিয়েছে ব্যাপকভাবে। বিশেষত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নসরুল্লাহকে হত্যা করেছে। শুধু দুই নেতাকেই হত্যা করেনি, বরং লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যাপক আক্রমণ ও ধংসযজ্ঞ চালিয়েছে। গাজায় চালিয়েছে গণহত্যা। ফলে, পৃষ্ঠপোষক ইরানের প্রতি এসব সংগঠনের আস্থা, বিশ্বাস ও মনোবল বাড়াতেই ইসরায়েলে আক্রমণ করা ছাড়া ইরানের আর কোনো গত্যন্তর ছিল না।


২। ইসরায়েলের আগ্রাসী ভঙ্গি ঠেকাতেও ইরানকে এই হামলা করে তার শক্তিমত্তা জানান দিতে হয়েছে। ইরান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, প্রয়োজনে সেটা যে সে তার অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যবহার করতে পারে সেটা দেখাতেও ইরান এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও