খোকনের সীমান্ত…

বিডি নিউজ ২৪ আমীন আল রশীদ প্রকাশিত: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৪৩

এনটিভির সাংবাদিক সীমান্ত খোকনের মৃত্যুসংবাদটি শোনার পরে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বরিশালের খ্যাতিমান সাংবাদিক লিটন বাশারের মুখ। লিটন বাশার মারা গেছেন ২০১৭ সালের জুনে। তার সোয়া সাত বছর পরে সীমান্ত খোকনের মৃত্যুর সঙ্গে এর কী সম্পর্ক? লিটন বাশারের মৃত্যুর কারণ ছিল হার্টের অসুখ। আর সীমান্ত খোকনের মৃত্যুটি আত্মহনন। কিন্তু তারপরও সীমান্ত খোকনের মৃত্যুসংবাদ শোনার পরে কেন আমরা লিটন বাশারের কথা স্মরণ করব— ওই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে জানতে হবে খোকন কেন নিজেই নিজের সীমান্ত ঠিক করে দিলেন। অর্থাৎ কেন তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিলেন?


সীমান্ত খোকন মারা গেছেন ৫৩ বছর বয়সে। ২০১৭ সালে যখন লিটন বাশারে মৃত্যু হয়, তখন তার বয়স ৪৬। বেঁচে থাকলে এখন তার বয়সও হতো ৫৩। অর্থাৎ সীমান্ত খোকন ও লিটন বাশার ছিলেন সমবয়সী। কিন্তু দুজনের মৃত্যুর মাঝখানে ব্যবধান ৭ বছর।


সীমান্ত খোকন আমার চেয়ে বয়সে বড়। কিন্তু দারুণ বন্ধুবৎসল। নবম সংসদে আমরা একসঙ্গে সংসদ ও নির্বাচন কমিশন কাভার করেছি। সীমান্ত ভাই তখন আরটিভির সিনিয়র রিপোর্টার। আমি এবিসি রেডিওতে। আমাদের অফিসও পাশাপাশি। কারওয়ান বাজারে। ওই কারণে প্রায়ই অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করে সীমান্ত ভাইয়ের গাড়িতে অফিসে ফিরতাম। সংসদে নিয়মিত ছিলাম বলে কবে কোন কমিটির মিটিং, এজেন্ডা কী, বড় কিছু হবে কিনা ইত্যাদি জানার জন্য সীমান্ত ভাই ফোন করতেন। গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে যেতেন এবং আমাদের দুজনের টাইমিং মিললে তিনি সাধারণত আমাকে কারওয়ান বাজার স্টার কাবারের সামনে থেকে পিক করতেন।


একসময় সীমান্ত ভাই রিপোর্টিং ছেড়ে নিউজ এডিটর হয়ে বসে গেলেন। আমিও তা-ই। ফলে আমাদের আর মাঠেঘাটে কিংবা অ্যাসাইনমেন্টে দেখা হতো না। ব্যক্তিগত পরিসরে যোগাযোগটাও সেভাবে আর ছিল না। এমনকি ফেসবুকেও না। কিন্তু তিনি যে এনটিভিতে কাজ করছেন, শারীরিক কিছু সমস্যা আছে— এসব অল্পবিস্তর জানতাম। এর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে তার মৃত্যুসংবাদটি কানে আসে। এক অদ্ভুত বেদনাবোধ তৈরি হয়। গভীর মমতামাখা তার মুখখানি ভেসে ওঠে। আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার, কথা কম বলা এবং নির্বাচন কমিশনের পুরোনো ভবনের গাছতলায় হঠাৎ কাউকে জোর গলায় ডাক দেয়া; লম্বা ছিলেন বলে একসঙ্গে অনেকগুলো টিভি ও রেডিওর মাইক্রোফোন সিইসির সামনে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা— সবমিলিয়ে সীমান্ত ভাই একজন অসম্ভব ভালো মানুষ, সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত, আন্তরিক। কিন্তু কী এমন ঘটল যে এরকম একজন মানুষকে শেষমেষ আত্মহননের পথেই বেছে নিতে হলো?



সীমান্ত খোকনের মৃত্যু নিয়ে দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনামে চোখ বুলানো যাক।


১. এনটিভির বার্তা সম্পাদক সীমান্ত খোকনের মৃতদেহ মিলল নিজের ঘরে: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম


২. সাংবাদিক সীমান্ত খোকনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার: প্রথম আলো।


৩. সাংবাদিক সীমান্ত খোকনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার: সমকাল।


৪. এনটিভির বার্তা সম্পাদক সীমান্ত খোকনের মৃত্যু: যুগান্তর।


৫. সাংবাদিক সীমান্ত খোকনের রহস্যজনক মৃত্যু: কালবেলা।


৬. এনটিভির বার্তা সম্পাদক সীমান্ত খোকন আর নেই: এনটিভি অনলাইন।


সীমান্ত খোকন সবশেষ যে টেলিভিশনে (এনটিভি) কাজ করতেন, তাদের অনলাইনের খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় তিনি নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি স্ত্রী এবং দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তিনি শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নে। সীমান্ত খোকন জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি কিশোরগঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার সাবেক সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করছিলেন।


পুলিশের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের খবর বলছে, সকাল থেকে সীমান্ত খোকনের রুমের দরজা বন্ধ ছিল। দুপুর দেড়টার দিকে পরিবারের সদস্যরা চাবি দিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখেন তিনি ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়েছেন। পরে পুলিশকে জানালে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।


তার কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলা গেছে, ২০১৯ সালে তিনি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর কোভিডেও আক্রান্ত হন। সব মিলিয়ে তার প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক দুর্বলতা। কোনোভাবেই নিজেকে ‘ফিট’ মনে করতেন না। শারীরিক এই দুর্বলতা তাকে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত করে ফেলে। বছর কয়েক ধরে তিনি কাজেও খুব একটা মনোযোগ দিতে পারতেন না। কিন্তু সহকর্মীদের আন্তরিকতায় নিউজরুমে তার ঘাটতি বোঝা যেত না। সহকর্মী এবং কর্তৃপক্ষও তাকে আগলে রাখতেন। যখনই ছুটি চেয়েছেন, পেয়েছেন। অক্ষমতার কারণে একাধিকবার চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু সহকর্মীরা বারবার সেটি আটকে দিয়েছেন। এমনকি কর্তৃপক্ষও তাকে জানিয়েছিল যে তিনি যতদিন খুশি ছুটি নিতে পারেন। চাকরি ছাড়ার প্রয়োজন নেই। এরকম একটি আন্তরিকতাপূর্ণ কর্মপরিবেশও খোকনকে তার চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণে বাধা দিতে পারল না! বুধবার দুপুরে এনটিভি ভবনের নিচে তার জানাজায় একাধিক সহকর্মীর চোখে অশ্রু দেখেছি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও