দোহাই লাগে, অপ্রয়োজনে হর্ন দেওয়া বন্ধ করুন

প্রথম আলো কাজী আলিম-উজ-জামান প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:০৫

সেদিন গভীর রাতের ঘটনাটি শুরুতে বলে নিই। কারওয়ান বাজারের সবজির ট্রাকের জ্যাম ঠেলে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে ওঠার কসরত করছিল আমাকে বহন করা সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি। শরীর-মনে সারা দিনের কাজের ধকল। এখন ভালোয় ভালোয় ঘরে পরিবারের কাছে পৌঁছাতে পারলেই হয়।


মালবাহী ভ্যানের ক্রিং ক্রিং, সিএনজি অটোরিকশার পোঁ পোঁ, প্রাইভেট গাড়ির ভোঁ ভোঁ, কাভার্ড ভ্যানের ক্রিক ক্রিক—কত রকমের যে আওয়াজ! রাতে যেখানে নীরবতা কাম্য, সেখানে উল্টোপাল্টা সব কারবার।


হঠাৎ পেছন থেকে একটা ট্রাক নাকি বাস বিকট হর্ন বাজাল। একেবারে কেঁপে ওঠা বলতে যা বোঝায়, আমার শরীর ঠিক তেমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাল। মনে হলো, শরীরের ভেতরে শিরা-উপশিরা যা যা আছে, বুঝি এবার ফেটে গেল!


রাতে সারা দেশ থেকে আসা সবজির ট্রাক কারওয়ান বাজারে ঢোকে। রাত ১২টার পরে এই বাজার ও সংলগ্ন এলাকায় জ্যাম নিত্যদিনের চিত্র। কোনো ধরনের শৃঙ্খলা না থাকায় এই জ্যাম যেন ছুটতেই চায় না। বসে বসে নিজের বিধিলিপিকে দোষ দেওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকে না। আমার মনের অবস্থাও সেদিন ও রকমই ছিল। ঠিক এমন সময় ওই চিড়িক দেওয়া হর্ন; সামনে এগোনোর পথ নেই, চালক তা জানেন, রীতিমতো দেখতে পাচ্ছেন, তারপরও এই অপ্রয়োজনীয়, অকারণ হর্ন তিনি বাজালেন। একবার নয়, একাধিকবার!


আজকাল রাজধানীতে মধ্যরাতেও শান্তি নেই। প্রচুর যান্ত্রিক যানবাহন রাতে চলাচল করছে এবং রীতিমতো জ্যাম লেগে যাচ্ছে। হানিফ উড়ালসড়কে রাত দুইটার সময়ও জ্যাম লেগে যায়। অনেকের হয়তো বিশ্বাস হবে না, কিন্তু এটাই সত্য। আর গাড়ির বাড়বাড়ন্ত উপস্থিতির মানেই হর্নের অসুস্থ প্রতিযোগিতা।



আজকাল দুনিয়ায় যেখানে হর্ন না দিয়ে গাড়ি চালানোর রেওয়াজ চলছে, সেখানে আমরা অপ্রয়োজনে হর্ন দিয়েই চলেছি। ভালোর চর্চা আমরা কি শুরু করতে পারব না? এই শব্দ বিস্ফোরণ যে পাশের মানুষের কতটা ক্ষতি করছে, তা বোঝার, উপলব্ধি করার কোনো ইচ্ছা যেন আমাদের নেই। আজকাল পথেঘাটে কোনো বাস বা কারচালককে অপ্রয়োজনে হর্ন দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে উল্টো তাঁরা আরও দুই–একবার বেশি হর্ন বাজিয়ে জবাব দেন, এই হলো অবস্থা। কে যায় কার সঙ্গে তর্ক করতে!


সড়ক পরিবহন বিধিমালা, ২০২২-এর বিধি-৮১ অনুযায়ী, অ্যাম্বুলেন্স, অগ্নিনির্বাপণ বা উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত মোটরযান অথবা রাষ্ট্রীয় জরুরি কাজে ব্যবহৃত মোটরযান ছাড়া অন্য যেকোনো মোটরযানে বহুমুখী হর্ন অথবা তীব্র, কর্কশ, আকস্মিক, বিকট বা ভীতিকর শব্দের হর্ন কিংবা যন্ত্র সংযোজন বা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।


কিন্তু এই বিধিমালার তোয়াক্কা করছে কে! যেকোনো ক্ষেত্রে আইন বা বিধির কমতি নেই আমাদের। কিন্তু একে মান্যতা দেওয়া, বাস্তবায়ন করানোর ক্ষেত্রে আমাদের পারদর্শিতা সফলভাবে একপ্রকার ব্যর্থ! আর এই বিধিমালা নিয়েও কথা বলতে হবে। রাষ্ট্রীয় জরুরি কাজে ব্যবহৃত গাড়ি কেন ভীতিকর হর্ন ব্যবহারের সুযোগ পাবে? কোনো প্রয়োজন আছে কি?


তা ছাড়া এই বিধিমালার আগেই উচ্চ আদালত রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। ট্রাফিক পুলিশ সে সময়ে কিছু তৎপরতাও দেখিয়েছিল মনে পড়ে।


কিন্তু এই ‘শব্দ যন্ত্রণা’র ব্যবহার কি থেমেছে? রীতিমতো ব্যবহৃত হচ্ছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানগুলোতে হরদম এই নিষিদ্ধ হর্ন বিক্রি হচ্ছে। সেখানে যন্ত্রগুলো উড়ে আসেনি। বাইরের কোনো দেশ থেকে আমদানি হয়েই এসেছে। কে দেখবে, কে ব্যবস্থা নেবে, জানি না। আগে ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিয়ে, জরিমানা করে দায় সারত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশ এখনো পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাচ্ছে না। কত দিন এমন চলবে, সেটা একটা প্রশ্ন। কিন্তু বেশি দিন এমন অবস্থা চলতে পারে না।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও