‘গণবিচার’ বিচার নয়, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

বিডি নিউজ ২৪ সৌমিত জয়দ্বীপ প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৩১

প্রথিতযশা লেখক-সাংবাদিক-কলামিস্ট নির্মল সেন লিখেছিলেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।’ কথাটা বাংলাদেশে বহুল চর্চিত। কথাটার অন্তর্হিত নির্যাসও বরাবরই প্রাসঙ্গিক। যখনই বাংলাদেশে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে, তখনই কথাটা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। বিশেষত, যখন সড়ক দুর্ঘটনা, ভবনধ্বস, অগ্নিকাণ্ড কিংবা গণপিটুনি বা গণধোলাইয়ের মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে, তখন।


অবশ্য প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ডের মতো ‘ক্যাপিটেল পানিশমেন্টে’র সাপেক্ষে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ একটু নড়বড়ে হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রস্বীকৃত বিচারিক মৃত্যুদণ্ডও স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। কিন্তু নির্মল সেনের প্রবাদতুল্য দাবির ভিত্তিতে আমরা বিচারিক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ফয়সালা তো দুরস্ত, প্রপঞ্চটিকে প্রশ্নবিদ্ধও করতে পারিনি কখনই। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ডের মতো ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর’ প্রক্রিয়া থাকবে কি না, মানবাধিকারের প্রশ্নে সে কথা তোলা যেতেই পারে। বিশেষত যখন কি না অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে সংবিধান সংস্কার বা পুনর্লিখনের আলোচনা শুরু হয়েছে।


অন্যদিকে, বাকি সবগুলো দুর্ঘটনার সঙ্গে গণপিটুনিতে আঘাতপ্রাপ্তি বা মৃত্যুকে একই বন্ধনীতে আবদ্ধ করা যাবে কি না, সেটা নিয়ে বাহাস হওয়া প্রয়োজন। গণপিটুনিকে ‘মব জাস্টিস’ হিসেবে স্বতঃসিদ্ধ করার চেষ্টা থাকে। অথচ, বিক্ষুব্ধ জনতা অসাংগঠনিক কিন্তু সংঘবদ্ধভাবে যখন কাউকে আক্রমণ করে তখন সেটিকে ‘জাস্টিস’ বলাটাই সমস্যাজনক।


সাহিত্যে ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ বলে একটা প্রপঞ্চ আছে। যার বহুবিধ ব্যাখ্যা হাজির করা যাবে। মোটা দাগে বললে সেটি এমন অদ্ভুতুড়ে বিচার, যা আসলে অন্যায়ের শাপমোচন করে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করে। মহাকাব্যিক ট্র্যাজেডির বয়ান বিবেচনায় এই বিচারের সঙ্গে ন্যায় ও নীতির সম্পর্ক আছে। কিন্তু, ‘মব জাস্টিস’ কি ‘পোয়েটিক জাস্টিস’? যার ‘বিচার’ হয়, তার প্রতি অদ্ভুতুড়ে বিচারই কি তার কর্মফল? নাকি কেন এ ধরনের সংক্ষুব্ধ হত্যাকাণ্ড নয়, সে তর্কও হওয়া প্রয়োজন।



‘জাস্টিস’ মানে বিচার এবং ‘মব’ মানে গণ হলে, মবজাস্টিস অর্থ দাঁড়ায় ‘গণবিচার’। তার মানে গণপিটুনি বা গণধোলাইয়ের সমার্থক হলো গণবিচার! কী ভয়ঙ্কর! মবের আরও কিছু ভয়ানক সমার্থক শব্দও আছে— হামলার উদ্দেশ্যে সমবেত উচ্ছৃঙ্খল জনতা; গুণ্ডাদল; মাস্তান; দাঙ্গাবাজ ইত্যাদি। এই অর্থগুলো থেকেও বোঝা যায়, গণপিটুনি আসলে মাস্তানি-গুন্ডামি বৈ অন্য কিছু নয়।


অথচ, গণপিটুনির সমার্থক হয়েছে গণবিচার! মানে, জনতা বিচারক হয়ে উঠবেন! সংবিধানস্বীকৃত সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ বলে, জনগণ বিচারকও হয়ে উঠবেন? প্রচলিত আইন-কানুন ও বিচারব্যবস্থাকে এতোটা পরিহাসপূর্ণ বানিয়ে ফেলা যায়!


‘মব জাস্টিস’ বিচার নয়, অবিচার; ‘মব ইনজাস্টিস’। ফলে, এই তথাকথিত গণবিচারকে শেষ পর্যন্ত বিচার বহির্ভূত হামলা কিংবা হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হামলা হিসেবেই আমাদের পাঠ করতে হবে, যা মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। কেউ যদি অপরাধ করেও থাকেন, প্রচলিত আইনি প্রথা ও প্রক্রিয়ায় বিচার পাওয়ার অধিকার তার আছে—এই সাদামাটা বিষয়টিকে যারা সরল কাণ্ডজ্ঞান দিয়েও বুঝতে পারেন বা চান না, তারা প্রত্যেকেই সম্ভাবনাময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রশ্রয় ও মদদদাতা।


বিগত ১৫ বছর ধরে যারা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরব, তাদের সমস্ত বয়ান-বাক্য ‘নতুন বাংলাদেশে’ এসে খারিজ হয়ে যাচ্ছে। কেননা, আশা করা হয়েছিল এই বাংলাদেশে আর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটবে না। অথচ, অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই নির্বিচারে বিচারের আগে বিচার শুরু হয়ে গেছে। জনতাই হয়ে উঠেছেন বিচারক!

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও