রাজনীতিতে শেখ হাসিনার পুনর্বাসন সহজ হবে না
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এক অস্থির সময়ে দেশের হাল ধরেছেন। দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর একে একে দাবিদাওয়া নিয়ে নবগঠিত এই সরকারকে যেভাবে ব্যতিব্যস্ত রাখা হয়েছে, তাতে এসব দাবিদাওয়ার পেছনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের নাগরিকদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। চারদিকের এসব নানামুখী অপতৎপরতা দেখে আশঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
দেশের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে দেশের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা পতিত সরকারের লোকজনের হাত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বভার গ্রহণের পর পরিস্থিতি ঘোলাটে করার যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর মধ্যে ১১ আগস্টের ‘জুডিশিয়াল ক্যু’-এর অপচেষ্টা অন্যতম। তিনি ওই দিন সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করেই ফুলকোর্ট মিটিং ডেকেছিলেন, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। ধারণা করা হচ্ছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে একটি জুডিশিয়াল ক্যু করার চেষ্টা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ছিলেন এ ষড়যন্ত্রের পেছনে। দেশের গোয়েন্দা বিভাগ জুডিশিয়াল ক্যু-এর আগাম তথ্য পেয়ে যাওয়ায় আওয়ামী বিচারপতিদের পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়।
বাংলাদেশ আনসার সদস্যদের সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাও দেশ অস্থিতিশীল করার আরও একটি অপতৎপরতা ছিল। দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব লোককে আনসার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, তাদেরই একটি অংশ ২৫ আগস্ট তাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সচিবালয় ঘেরাও করে রাখে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিল ও অন্যান্য দাবি পূরণের ব্যাপারে যথাযথ নিয়ম মেনে বিবেচনা করা হবে বলে ঘোষণা দিলেও তারা সচিবালয় ঘেরাও প্রত্যাহার করেনি। ঘটনার একপর্যায়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। অতঃপর সেনাবাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।