দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে একটি আতঙ্কই প্রধান হয়ে ওঠে, তা হচ্ছে বাঁধ ভেঙে যাওয়া। টেকসই বাঁধের জন্য উপকূলবাসীর আকুতি আমরা বছরের পর বছর দেখে আসছি। কিন্তু তাঁদের সেই আকুতিতে রাষ্ট্র বা কোনো সরকারের হৃদয় টলে না। তখন বাঁধ রক্ষার সংগ্রামে নেমে আসেন নিজেরাই। বাঁধ ভেঙে গেলে সেটি মেরামতও করেন তাঁরা। বিগত বছরগুলোতে এমন বহু ঘটনা আমরা দেখেছি। কয়েক দিন আগে আবারও এমন নজির রাখলেন খুলনার দাকোপ উপজেলার মানুষেরা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সপ্তাহখানেক আগে থেকে পানখালী ইউনিয়নের খোনা মোল্লাবাড়ির সামনে ঢাকী ও ভদ্রা নদীর মিলনস্থলের কাছাকাছি তীরের পাউবোর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। বাঁধের ৮০ শতাংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন মাটি দিয়ে সেটা কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছিলেন। শুক্রবার দুপুরের ভরা জোয়ারে মুহূর্তের মধ্যে মূল বাঁধের প্রায় ৪৫ ফুট ঢাকী নদীতে চলে যায়। এরপর জোয়ারের পানি হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এর আগেও কয়েকবার একই জায়গায় বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢোকে।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় গ্রামবাসী ও কৃষকেরা এগিয়ে আসেন বাঁধটি মেরামত করতে। শুক্র ও শনিবার দুই দিনের প্রচেষ্টায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধটি মেরামত করে পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। তবে এরই মধ্যে এলাকার প্রায় দুই হাজার বিঘা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়িতে এক থেকে দেড় হাত উচ্চতার পানি উঠেছে। এখন জলকপাট (স্লুইসগেট) দিয়ে পানি সরানো হচ্ছে। তবে উৎকণ্ঠা এখনো কাটেনি। কারণ, বাঁধের আশপাশ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।
গত কয়েক মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে। ৩১ নম্বর পোল্ডারের কাজীবাছা, শিবসা, ঢাকী নদীর বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। ৩১ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল ষাটের দশকে। সেটির বিভিন্ন পয়েন্ট এখন ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সারা বছরই জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলে। মাঝেমধ্যে সেগুলো ভেঙে যায়। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে সেগুলো আবার ঠিক করেন। ওই পোল্ডারের বাঁধ নির্মাণে মন্ত্রণালয়ে নকশা ও পরিকল্পনা পাঠানো আছে। অন্যদিকে ৩১ নম্বর পোল্ডারে জাইকার অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৭৫০ মিটার স্থায়ী নদীশাসনের কাজ চলমান।
- ট্যাগ:
- মতামত
- নিরাপত্তা
- উপকূলীয় এলাকা