লুটপাটকারীদের ধরা হবে, একটা বার্তা যাবে সমাজে
অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস হলো আজ। এই এক মাসে আর্থিক খাতে বেশ কিছু নীতি সিদ্ধান্ত এসেছে। আরও কিছু সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষায়। এগুলোসহ অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শনিবার প্রথম আলোর সঙ্গে জুম প্ল্যাটফর্মে কথা বলেছেন অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন। আরও বলেছেন, আরেকটি বড় কাজ হচ্ছে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
অর্থনীতিকে যে অবস্থায় এসে পেলেন, তার মূল্যায়ন করবেন কীভাবে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি, ক্ষমতা গ্রহণ করিনি। মাত্র তো এক মাস হলো। অর্থনীতির মধ্যে ব্যাংক খাতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খাতটিতে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর কিছু পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন। অর্থনীতিকে যদি আমরা একটা গাড়ি হিসেবে বিবেচনা করি, সেই গাড়ির গতিটা মন্থর হয়ে গিয়েছিল। আমরা এখন গতিটাকে বাড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছি। ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বিদেশি সহায়তা আমরা পাব। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইতিমধ্যে বলেছে, আমাদের টিমটা ভালো এবং আমরা আগের সময়ের তুলনায় পেশাদার। এটা ঠিক যে আমাদের সদিচ্ছা আছে। ফলে সমাধান করাও কঠিন কিছু হবে না।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তো পুরোপুরি উন্নয়ন হয়নি। ফলে অর্থনীতির সমস্যার সমাধান কীভাবে করবেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: এ কথার সঙ্গে একমত। দেখুন, অর্থনীতির দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে সামষ্টিক, অন্যটি ব্যষ্টিক। ব্যাংক খাত, জ্বালানি খাতসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার দিকে আমরা নজর দিয়েছি। ব্যাংক খাতে অনেক পুনর্গঠন হচ্ছে। পর্ষদ সাজানো হচ্ছে নতুন করে।
আমরা চাইছি যে এ খাতে যে আস্থার সংকট আছে, তা দূর হোক। তারল্য সমস্যা দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো ভূমিকা রাখছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখলাম চট্টগ্রাম বন্দরে সমস্যা। বন্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক বন্ধ হয়ে গেল। দ্রুত পানগাঁও বন্দর চালু করার ব্যবস্থা করলাম। ব্যাষ্টিক অর্থাৎ মাইক্রো সেক্টরে জোর করে দাবিদাওয়া মেটানোর চেষ্টা চলছে। আমরা চেষ্টা করছি, এসব সমস্যা দূর করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে, আরও ভালো হবে।
এই সময়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী বলে মনে করছেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আস্থা ফিরিয়ে আনা। ভঙ্গুর অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা। এগুলো ঠিকঠাক করাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
আগে দেখা যেত বিশেষ গোষ্ঠী ও শ্রেণির জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থাকত। আজও (শনিবার) আপনি পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনাসহ রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন, মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা তা-ই। কতটুকু পারবেন বলে মনে করছেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: পৃষ্ঠপোষকতার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবে পাচার করা অর্থ উদ্ধার কোনো সহজ কাজ নয় এবং তা দ্রুত করার বিষয়ও নয়। তবে আমরা কিছু টাস্কফোর্স করছি। ব্যাংক খাতেও সংস্কার আসবে। সম্পত্তি উদ্ধারের চেষ্টাও আমরা করব। আগে সমস্যা চিহ্নিত করব। দ্বিতীয় কাজ হবে অ্যাকশনে যাওয়া। পুরো কাজই আমরা করব স্বচ্ছতার সঙ্গে। আবার ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে বন্ধ না হয়, সে দিকটাও খেয়াল রাখব।
আগের সরকারের ১৫ বছরে অনেকেই রাষ্ট্রীয় সুবিধা ব্যবহার করে বিত্তশালী (অলিগার্ক) হয়েছেন, আবার অনেকে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। তাঁদের নিয়ে কী করবেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমি তো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে। আমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, কথা বলেছি। তাঁদের বলেছি যে তাঁদের অনেকেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মুনাফা করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে তাঁদের অনেকে দেশের মধ্যেও অনেক পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেন। দেখা গেল কোনো খাদ্যপণ্যের দাম এক টাকা বেড়েছে। ডিমের কথাই যদি বলি, হয়তো ডিম উৎপাদনের কাঁচামালের দাম এক টাকা বেড়ে গেল আন্তর্জাতিক বাজারে, একশ্রেণির ব্যবসায়ী তখন ডিমের দাম বাড়িয়ে দেন পাঁচ টাকা। এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর করা যাবে না। দেখবেন এখন অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ হচ্ছে। তাঁদের সম্পদও জব্দ হবে। আমরা ব্যবস্থা নিয়ে রাখছি।