‘আমাকে আর কেউ চাকরি দেবে না, বলবে তোর পা নেই’
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)। পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় তলায় বি ওয়ার্ড। গতকাল বৃহস্পতিবার এই ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, একাধিক তরুণ বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা সবাই বৈমষ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ বা অন্য কোনোভাবে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।
তাদেরই একজন আলী আশরাফ। আন্দোলন চলাকালে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলিতে পায়ের গোড়ালি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সেই পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোও হয়। তার বাম পায়ের গোড়ালি থেকে কেটা ফেলা হয়েছে। অন্য পা থেকে মাংস কেটে ক্ষতস্থানে লাগানোর যন্ত্রণায় তার গায়ে জ্বর চলে এসেছে। পাশে বসে ভাই রুহুল আমিন ও বোন আসমা খাতুন তার মাথায় পানি পট্টি দিচ্ছেন।
বি ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর বেডের রোগী আলী আশরাফের অবস্থা খুব একটা ভালো না হওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। আশরাফ জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার আলতাফ হোসেনের সন্তান। খুলনা মণ্ডল জুট মিলে কর্মরত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৫ আগস্ট দুপুরে খুলনায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
শুধু আলী আশরাফই নন, ওই ওয়ার্ডের ৫৬টি বেডের সব কটিতেই ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুলিবিদ্ধ তাদের কারও পা কেটে ফেলা হয়েছে, কারও পায়ে রড লাগানো হয়েছে, কারও গুলিতে টুকরো হয়ে গেছে পায়ের হাড়।
সেখানে এমনই একজন রোগী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন (৩২)। রাজশাহীর পুঠিয়া থানাধীন মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেনের সন্তান। থাকতেন রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার মনিপুরী পাড়ায়। এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ইমরানের আয়ে চলতো তাদের ছয়জনের সংসার।