বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান কেন জরুরি

যুগান্তর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪৭

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রাঙামাটি জেলায় যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে-তার মধ্যে তুলনামূলকভাবে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার অংশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


ভারতের দ্য হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকা থেকে জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যায় ২৬ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং দেড় লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আরও জানা যায়, ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশের সীমানার মাঝখানে প্রায় ১২০ কিলোমিটার জায়গা রয়েছে, যেখানে বিগত সপ্তাহে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টির পানি ফেনী জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাছাড়া গত সপ্তাহে বাংলাদেশের ওই এলাকাগুলোতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছিল।


ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ১৯৯৩ সালের ২১ আগস্ট ত্রিপুরায় একদিনে ২৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। ২০২৪-এর ২০ আগস্ট একদিনে ৩৭৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তাছাড়া ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে ২১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ওই অঞ্চলে ৫৩৮.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা পূর্ব ধারণার চেয়ে ১৫১ শতাংশ বেশি। ফলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতের পানি মিলে ওই অঞ্চলে বন্যা এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে।



জানা যায়, ভারত ও বাংলাদেশের মাঝখানে ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানির উচ্চতা ৯৪ মিটারের চেয়ে বেশি হওয়ায় বাঁধটি খুলে দেওয়া হয়। তবে নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, উজানের পানির চাপে বাঁধটি খুলে গেছে। বাংলাদেশে বন্যায় এ পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৭ লাখেরও বেশি মানুষ। ভারতের অভ্যন্তরে লাগোয়া সীমান্তের জেলাগুলোও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বৃষ্টিপাতও বাংলাদেশে বন্যার জন্য অনেকটা দায়ী। তাছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় অপরিকল্পিত উন্নয়নে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় বৃষ্টিপাতের পানি নদীপথে মেঘনা বা যমুনা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে যেতে পারছে না। ফলে ওই এলাকায় বন্যার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।


এসব অঞ্চলে ৩০ বছর আগে নিয়মিত বন্যার প্রাদুর্ভাব হতো। প্রায় ১৫ বছর আগে এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। একসময় গোমতী নদীকে কুমিল্লার দুঃখ বলা হতো। পরবর্তীকালে গোমতী নদীতে বাঁধ নির্মাণ করায় বন্যার প্রাদুর্ভাব কমে যায়। বর্তমানে এ অঞ্চলে আবারও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফেনীর পাশে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদী শাসন এ অঞ্চলে বন্যার জন্য অনেকটা দায়ী। তাছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধের কারণে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় মেঘ উত্তরে সরে যেতে পারেনি। ফলে স্থানীয়ভাবে নিম্নচাপ হওয়ায় ওই এলাকায় অতিবৃষ্টি দেখা দিয়েছে। এটি বন্যার ব্যাপকতার জন্য অনেকটা দায়ী।



দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৪৩ বছরে ৭৮টি বন্যায় প্রায় ৪২ হাজার মানুষ মারা গেছেন। আর্থিকভাবে প্রায় ১২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু ২০১৪ সালের বন্যায় প্রায় ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল, যা ছিল দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের বন্যায় প্রায় ৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ওই বন্যায় ১০০ কোটি ডলারের বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়। মোটা দাগে বলা যায়, বন্যা বাংলাদেশের একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ায় এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।


বর্তমানে বন্যা মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় সাহায্য অব্যাহত রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলগুলো দলমত নির্বিশেষে বন্যার্তদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসার দাবিদার। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের সব মানুষের একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার থাকা উচিত। এখনো বন্যাদুর্গত এলাকায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। তাছাড়া কৃষি, পশুপাখি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।


মানুষের ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মৎস্য খামার, ফসলের খামার, ডেইরি ফার্ম, মুরগির খামার ও কাঁচা-পাকাবাড়ি সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক নেতারা এবং বিভিন্ন সংস্থা উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও