পানিবৈষম্য ও বন্যার্ত মানুষের কান্না থামবে কি?
গত ২১ আগস্ট গভীর রাতে রাস্তা থেকে হঠাৎ শোরগোল ভেসে আসতে থাকলো। তার সাথে এলাকার নাইটগার্ডদের হুইসেলও শোনা যাচ্ছিল। ভাবলাম রাতে দল বেঁধে পাহারারত পাড়ার ছেলেরা মিলে হয়তো চোর-ডাকাত কাউকে ধরে ফেলেছে। কৌতূহলবশত পড়াশোনা বন্ধ করে বারান্দায় গিয়ে শব্দগুলোর অর্থ অনুধাবন করার চেষ্টা করলাম। পরক্ষণেই বুঝলাম, এগুলো কোনো মিছিলের সাধারণ শব্দ বা গৎবাধা দাবির আর্জি নয়। বিশেষ কোনো দাবি আদায়ের জন্য সমস্বরে হুঙ্কার দিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্রমাগত সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল। গভীর রাতে ছাদ থেকে দেখা অবিশ্বাস্য সাহসীদের হঠাৎ এত লম্বা মিছিল চোখে পড়েনি।
সে রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জেনেছি- সারাদেশের সব বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সীমান্তের ওপাড়ে প্রতিবেশী দেশের বাঁধ নির্মাণ ও পানিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দশ মিনিটের নোটিশের বার্তায় একযোগ রাস্তায় নেমে পড়েছিল! স্লোগান ছিল- ‘আমার দেশ ডুবলো কেন, সরকার জবাব চাই’। ‘বন্যায় যখন মানুষ মরে, আবরার তোমায় মনে পড়ে’। ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা’। পরদিন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জয়গায় বিভিন্ন সংগঠন ‘আন্তদেশীয় নদীগুলোতে ভারতের অবৈধ ও একতরফা সব বাঁধ উচ্ছেদের দাবিতে ঢাকা থেকে ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ অভিমুখে ২৭ মার্চ ছাত্র-জনতার লংমার্চ ঘোষণা করে’।
এছাড়া পরদিন টিভি সংবাদে একজন উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যেও জানা গেছে- ‘আগাম সতর্কতা না জানিয়ে বাঁধের গেট খুলে দেওয়া অমানবিক কাজ হয়েছে।’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, “পানি ছাড়ার আগে বাংলাদেশকে জানানো সংক্রান্ত চুক্তি ভারত প্রতিপালন করেনি। উজানের দেশে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলে এবং পানি ছেড়ে দেওয়ার প্রয়োজন হলে, ভাটির দেশকে আগে থেকেই জানানো উচিত; যাতে তারা প্রস্তুতি নিতে পারে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তবে, এবার ভারত এই জানানোটি করেনি, যদিও আমাদের চুক্তিতে এমনটি করা বাধ্যতামূলক।"
- ট্যাগ:
- মতামত
- বন্যা
- পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়