হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টির প্রথম পর্বে কে জিতল
আশঙ্কটা প্রায় এক মাস ধরে ক্রমাগত বেড়ে চলেছিল। অবশেষে তা–ই ঘটল। লেবাননে অবস্থানরত শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ রোববার ভোরে ইসরায়েলের ১১টি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ৩২০টির বেশি কাতিউশা রকেট ছুড়েছে।
অবশ্য হিজবুল্লাহ হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইসরায়েল আগেভাগেই দেশটির উত্তর দিক লেবানন সীমান্তে বিমান হামলা চালায়, যাতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, এটা তাদের কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে হত্যার জবাবের প্রথম পর্ব। রোববার ভোরে এই পাল্টাপাল্টির পর দুটি প্রশ্ন সবার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথমত, যদি এটা প্রথম পর্ব হয়, তাহলে দ্বিতীয় পর্ব কবে ঘটবে? আর প্রথম পর্বের এই পাল্টাপাল্টি খেলায় কে জিতল বা এগিয়ে গেল?
এ দুটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য প্রায় চার সপ্তাহ আগে ফিরে যেতে হবে, যখন কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রথমে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর সিনিয়র সামরিক কমান্ডার এবং স্ট্র্যাটেজিক ইউনিটের প্রধান ফুয়াদ শুকরকে হত্যা করে।
সেটা ৩০ জুলাই মঙ্গলবার রাতে। এর কয়েক ঘণ্টা পর ৩১ জুলাই বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে তাঁর বাসভবনে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়।
ইসরায়েল অবশ্য হিজবুল্লাহর কমান্ডারকে হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছে, এই সশস্ত্র সংগঠনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহর সবচেয়ে কাছের একজন হিসেবে পরিচিত শুকরকে তারা হত্যা করেছে। তবে ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
সাধারণত ইরানের ভেতরে বেছে বেছে এ রকম হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েল সরকার বা সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে—স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করে না। কিন্তু হানিয়া হত্যার পর ইসরায়েল উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেনি। সেটা পারার কথাও নয়।
গোয়েন্দা সাফল্য
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ও গুপ্তচর বাহিনী ব্যর্থতার জন্য নিজ দেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল। তবে ৩০-৩১ জুলাই শুকর ও হানিয়াকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের হৃত মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ–এর সম্পাদকীয়তে এ রকমটি মন্তব্য করে বলা হয়েছিল, এ কাজগুলো পরিকল্পনার সক্ষমতা, নিখুঁত গোয়েন্দাবৃত্তি ও পরিচালনগত সামর্থ্যের স্বাক্ষর রেখেছে।
অবশ্য হারেৎজ–এর সম্পাদকীয়তে এটাও বলা হয়েছে, এসব হত্যাকাণ্ড ও সামরিক চাপ বাড়িয়ে গাজা উপত্যকায় জিম্মি হয়ে থাকা ইসরায়েলিদের মুক্ত করা যাবে না। হামাস ১১৫ জনকে ধরে নিয়ে জিম্মি করে রেখেছে, যাঁদের অর্ধেক এখন বেঁচে আছে আর কয়েকজন ছাড়া পেয়েছেন। একটা সমঝোতা চুক্তিতে না এলে বাকিরা ছাড়া পাবেন না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পাল্টাপাল্টি হামলা