শিক্ষাসংক্রান্ত নীতির অতি উচ্চাভিলাষ থেকে বেরোতে হবে

যুগান্তর একেএম শাহনাওয়াজ প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩০

ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অথচ গৌরবময় একটি তারুণ্যের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন বুকের ওপর চেপে থাকা পাথর সরে গেছে। নিঃশ্বাস নেওয়া সহজ হলেও স্বাভাবিকভাবে এখনো শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। অনেক দিক থেকে বহু কাঠামো ভেঙে পড়েছে। দৃশ্যমান ও মনস্তাত্ত্বিক স্খলন অনেক হয়েছে। এসব মেরামত করা খুব সহজ নয়। সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল শপথগ্রহণের পর একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিককে যথার্থই বলেছেন ‘চ্যালেঞ্জ অনেক বড়’।


তবে আমরা বলতে চাই, যত বড় চ্যালেঞ্জই হোক, তা অনতিক্রমণীয় নয়। না হলে মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও কি কেউ ভাবতে পেরেছিল একটি মহাপ্রতাপশালী এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন কাঠামো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। আমাদের ক্ষমতাপ্রিয় সব দলের রাজনৈতিক নেতারা তোতা পাখির মতো কতগুলো কথা বলতেন-‘দলের চেয়ে দেশ বড়’, ‘জনগণ দেশের প্রকৃত মালিক’ ইত্যাদি।


কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর প্রতিফলন ঘটাতেন না। প্রতারিত হতো দেশবাসী। এ পর্যন্ত যে দলই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে সবারই চারিত্রিক ধরন একই ছিল। ক্ষমতায় এসে দলের চেয়ে বড় কিছু থাকেনি। দেশের মালিকানা কার্যত দল ও দলীয় সরকারের হাতেই থাকত। যে কারণে সাধারণ মানুষের ভাগ্যে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কখনো ঘটেনি। মানুষের যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে এর ধরনটি এমন, ‘আমরা আমটি খাই তোমাদের জন্য আঁটি রাখলাম।’ গত ১৫ বছরে জনগণের ভাগ্যে তবু আঁটি জুটেছে। এর আগে আঁটি পাওয়াও কঠিন ছিল।



এমন বাস্তবতায় ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে তো অনেক কাঠামোই। এগুলো মেরামত করা খুব সহজ কথা নয়। তবে অসম্ভবও নয়। কারণ এ অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। যার নেতৃত্বে ছিল টগবগে তারুণ্য। এরা এক দুজন নয়-ছড়িয়ে আছে সারা বাংলাদেশে। যাদের বুকে আছে নিষ্কলুষ দেশপ্রেম; রাজনীতির সুবিধাবাদীদের মুখের যপমালা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নয়। মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে জন্ম নেওয়া এ প্রজন্ম মেধাবী। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট-ইতিহাস তাদের চোখে অচেনা অজানা নয়। তাই নির্মোহভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ওরাই ধারণ করতে পেরেছে বেশি। এটিই বিধিবদ্ধ রীতি।


ইংরেজ দার্শনিক, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ আর. জি. কলিংউড বিশ শতকের শুরুতে বলেছিলেন, ইতিহাস লিখবেন শুধু পেশাজীবী ইতিহাসবিদ। কারণ তিনিই জানেন ইতিহাস লিখন পদ্ধতি, তথ্যসূত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার। কলিংউডের মতে, ঘটনা ঘটার পঞ্চাশ বছর পর সে সময়ের ইতিহাস লিখতে হয়। কারণ ততক্ষণে ঘটনাসংশ্লিষ্ট মানুষ হয় বেঁচে থাকেন না অথবা বৃদ্ধ হয়ে যান। ঘটনাসংশ্লিষ্ট মানুষের হাতে ইতিহাসে অতিরঞ্জন বা ইচ্ছাকৃত বিকৃতি ঘটতে পারে।


নির্দিষ্ট ঘটনার দুই প্রজন্ম পর সে সময়ের ইতিহাস লিখতে হলে তথ্যসূত্র বিশ্লেষণ করে সত্যের কাছাকাছি পৌঁছার সুযোগ থাকে বেশি। আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান প্রজন্মের মেধাবীরা মুক্তিযুদ্ধকে আরও অনেক স্বচ্ছভাবে দেখতে পায়। ফলে দেশের প্রতি ভালোবাসা তাদের মধ্যে অনেক বেশি থাকে। সততার শক্তিটিকেই ওরা ধারণ করে। তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে পারে। এ কারণেই আমি বিশ্বাস রাখি, যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে তবে অন্তর্বর্তী সরকার সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে সফল হবে। আরও আশ্বস্ত হওয়ার কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ কৃতী মানুষটি বিশ্ববরেণ্য। মানুষের সঙ্গে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। উপদেষ্টামণ্ডলীতে যারা রয়েছেন নানাভাবেই তাদের অনেকে আমাদের সুপরিচিত। যার যার প্রতিভায় তারা উজ্জ্বল।


আমি বিশ্বাস করতে চাই, অনেকের ভেতর রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকলেও সরকার পরিচালনায় তারা নিরপেক্ষ থাকবেন। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা একটি নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক সরকার গঠন করতে পারিনি। জঞ্জালমুক্ত করে গণতন্ত্রকে আপন গতিতে এগিয়ে যেতে দেইনি। সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ রুদ্ধ করে রেখেছি। এখন দেশবাসীর প্রত্যাশা, বর্তমান সরকার একটি গ্রহণযোগ্য মডেল স্থাপনের কৃতিত্ব দেখাতে সফল হবে। যা ভাঙার সাহস কোনো রাজনৈতিক সরকার দেখাতে পারবে না। সব সেক্টর সংস্কারেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আজকের লেখাটিতে শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে কিছুটা দৃষ্টিপাত করার চেষ্টা করব।


আমরা বহুবার বলার চেষ্টা করেছি, একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন টেকসই হয় না এবং উন্নয়নের গাড়িও সচল থাকে না। এজন্য দেশের শিক্ষা খাতটির উন্নয়ন রাষ্ট্রীয় নীতিতে গুরুত্ব পাওয়া উচিত। কিন্তু বিগত কোনো সরকারই শিক্ষা খাত নিয়ে গভীরভাবে ভাবেনি। স্কুল শিক্ষা নিয়ে অপ্রয়োজনীয় নিরীক্ষা হয়েছে বেশি। ফলে লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে দেখেছি। ১০ জুলাই পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে স্বস্তি পেলাম আধুনিকায়নের নামে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য চলমান প্রশিক্ষণ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত শুনে। গত সরকারের কঠিন দলীয়করণ নীতি কোনো সেক্টরেই সুস্থ ধারার বিকাশ ঘটতে দেয়নি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও