অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুভ হোক

যুগান্তর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৫

জাগ্রত শিক্ষার্থীসমাজ ও দেশপ্রেমিক জনতার অকুতোভয় আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ভয়াবহ, লজ্জাজনক ও নজিরবিহীন পতন হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলকে কেন্দ্র করে ভয়কে জয় করে শিক্ষার্থীসমাজ দেশপ্রেমিক জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন এগিয়ে নেয়।


পরবর্তীকালে নির্যাতন ও মৃত্যুকে পরোয়া না করে এ আন্দোলনকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে রূপান্তরিত করে। পুলিশের গুলিকে তোয়াক্কা না করে আন্দোলন এগিয়ে নিতে প্রাণ বিসর্জনেও পরোয়া না করলে এক পর্যায়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আন্দোলনকর্মীদের ওপর গুলি না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। উপায়ান্তর না পেয়ে এ ‘আয়রন লেডি’খ্যাত প্রধানমন্ত্রী গোপনে পদত্যাগ করে নিজ দলের পায়ে কুড়াল মেরে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যান। এ খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রজনতা বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠেন।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে দেশকে গণতান্ত্রিক লাইনে উঠাতে সে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাজি করাতে সমর্থ হন। প্রফেসর ইউনূস প্যারিস থেকে ৮ আগস্ট দেশে ফিরে ওইদিন রাতে হাসিনা সরকারের পছন্দকৃত রাষ্ট্রপতির কাছে বঙ্গভবনে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে অন্য উপদেষ্টাদের নিয়ে শপথ গ্রহণ করেন।



অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণের ফলে দেশে চলমান শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির অবসান হয়। একদিকে ভেঙে পড়া অর্থনীতি, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি, দুর্নীতিপ্রভাবিত ও দলীয়করণকৃত প্রশাসন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং দলীয় লেজুড়বৃত্তিনির্ভর রাজনীতির অশুভ প্রভাবে ধ্বংসের কার্নিশে উপনীত শিক্ষাব্যবস্থা নাগরিক সমাজকে হতাশায় নিমজ্জিত করে রেখেছিল। অন্যদিকে অপরিকল্পিত তথাকথিত উন্নয়নের নামে গণতন্ত্রকে হাসপাতালে এবং গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা হিসাবে বিবেচিত নির্বাচনকে গোরস্থানে পাঠিয়ে কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকার নাগরিক সমাজের জীবন বিপন্ন করে তুলেছিল। এরপর আবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেটবাজি নিয়ন্ত্রণে সরকারের চরম ব্যর্থতায় নাগরিকজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।


ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও অবৈধ আর্থিক লেনদেন যুবসমাজকে করেছিল চরম হতাশায় নিমজ্জিত। এমন দুঃসহ অবস্থায় বিলোপকৃত কোটাব্যবস্থা আবারও চালু করার উদ্যোগে শিক্ষার্থীসমাজ রোষে ফেটে পড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামে। পোশাকধারী বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরে পড়লে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা সরকারের পদত্যাগ তথা একদফার দাবিতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেনা মোতায়েন, কারফিউ উপেক্ষা করে সারা দেশে ছাত্রজনতার হাসিনাবিরোধী গণবিস্ফোরণ ছড়িয়ে পড়লে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে গোপনে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যান। ফলে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দুঃশাসনের অবসান হয়। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হাল ধরলে মানুষ আবারও আশাবাদী হয়ে ওঠেন। তারা আবারও স্বপ্ন দেখতে চান। এ স্বপ্ন বিত্তশালী বা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন নয়। এ স্বপ্ন মামলা-হামলা থেকে বাঁচার স্বপ্ন। খুন-গুম, আয়নাঘর থেকে বাঁচার স্বপ্ন। নিরাপদে ঘুমানোর স্বপ্ন। দুবেলা ডাল-ভাত খাওয়ার স্বপ্ন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার স্বপ্ন। গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার স্বপ্ন। দেখার বিষয়, জনগণের এমন স্বপ্ন পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে নিরাপদ করে দেশকে কতটা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে। টাকা পাচারকারী ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ অর্থ-সম্পদের মালিকদের আদৌ শাস্তি দিতে পারে কিনা।


নবগঠিত ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা যোগ দিয়েছেন, তাদের সবাই যোগ্য। এদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন নেই। এরা সবাই মিলে চেষ্টা করে যদি গ্রহণযোগ্য সময়ের মধ্যে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তাহলে ক্রমান্বয়ে মানুষ আবারও সম্মানজনকভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখা শুরু করবে। তবে এ সরকারকে প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ফেলতে হবে। বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রশাসনিক রদবদল এবং নতুন নিয়োগ দিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, উৎখাত হয়ে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুচরদের সবাই দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে যায়নি। তাদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার, প্রশাসনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে এদের অবস্থান রয়েছে। এরা এ সরকারে শরিক হয়ে অথবা ভিন্ন কৌশলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও