জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্তিমূলক তথ্য যে কারণে জরুরি
আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। প্রতিবছর ১১ জুলাই দিবসটি উদযাপিত হয়। এবারের আসর ৩৫তম। ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিভিন্ন বিষয়কে প্রতিপাদ্য করে বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ উদযাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পিত পরিবারের ইতিহাস পাঁচ দশকেরও বেশি।
গত ছয় বছরের বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের প্রতিপাদ্যে জনগণের ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার, প্রজনন স্বাস্থ্য, নারী ও শিশুর সুরক্ষা, অধিকার ও পছন্দ নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য– ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উপাত্ত ব্যবহার করি, সাম্যতার ভিত্তিতে টেকসই ও সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি’।
বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ, সঠিক সেবা সঠিক মানুষকে পৌঁছানো, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্তিমূলক তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে সর্বস্তরে তথ্য সরবরাহ খুবই জরুরি। এ সেবাগুলো প্রদানে বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় কতটা স্মার্ট তা নির্ভর করবে তার সংগৃহীত তথ্যভান্ডারের বিস্তৃতির ওপর।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যেমন দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। ২০২৩ সালে ৬৯.৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭.৪ শতাংশ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ১৫ বছরের ওপরের ৮৬.৫ শতাংশ পুরুষ ও ৬২.৮ শতাংশ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ২০২৩ সালে ১৫ বছরের ওপরের ৫৮ শতাংশ পুরুষ ও ৪২.৬ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করে। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে (পুরুষ ৮০.১ এবং নারী ৭৫.৮)। নারী-পুরুষ উভয়েরই গড় আয়ু বেড়েছে। দেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী বছরগুলোতে দেশের প্রতিটি খাতের প্রতিটি নির্ঘণ্ট কী কী, ওই নির্ঘণ্টের বর্তমান অবস্থা কী, আগামীতে বাংলাদেশ উন্নয়নের কোন পর্যায়ে পৌঁছাতে চায়, তার সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। যেমন শিক্ষার হার, নারী শিক্ষার হার, নারীর চাকরিতে অংশগ্রহণ বাড়ানো; দারিদ্র্য বিমোচন, ১ ডলারের নিচে আয়কারী মানুষের হার, শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার কমানো; কিশোর-কিশোরীর শারীরিক মানসিক বিকাশে গুরুত্ব প্রদান, সর্বজনীন প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, পরিকল্পিত পরিবার গঠন বিষয়ে সুস্পষ্ট গন্তব্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক তথ্যভান্ডার না হয় তাহলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুফল সবাই পাবে না। উন্নয়ন টেকসই হবে না, সমাজ থেকে দারিদ্র্য, অসমতা, অন্যায্যতা দূর হবে না।
বৃহত্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০ বছর আগের এবং বর্তমান অবস্থানের তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ২০৪১ সালে কোথায় যেতে চাই, তার সুনির্দিষ্ট মাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছি। কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার ১৬৯টি টার্গেটের মধ্যে কোন টার্গেট বাস্তবায়ন করবে, সে দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি টার্গেট ঠিকমতো বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়, নিরীক্ষণ ও তদারকির জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, যে পর্যায়ের জনশক্তি যেখানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা তা হলো কিনা। দেশের কত শতাংশ মানুষ সেবা গ্রহণ বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে নিজের তথ্য নিজে ব্যবহার করতে পারে, তা আমাদের জানা থাকা দরকার।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস