কোটা বহাল বা বাতিল কি আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়

প্রথম আলো জাহেদ উর রহমান প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০২৪, ১৩:৫৫

২০১৮ সাল। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা এবং সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গন উত্তাল হয়ে উঠেছিল। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দমন-পীড়নের মুখেও সেই আন্দোলন যখন আরও বেশি উত্তাল হয়ে ওঠে, তখন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে দিয়েছিল সরকার। যদিও আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, সে সময়কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা সম্পূর্ণ বাতিল চাননি, চেয়েছিলেন সংস্কার। তাঁদের আন্দোলনের জন্য তৈরি সংগঠনটির নামেও ছিল ‘সংস্কার’ শব্দটি।


সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কোটা সংস্কারের জন্য শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তায় নেমেছেন। এই প্রেক্ষাপটেই আমরা কয়েকটি প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করব এই কলামে। সরকার কি চাইলেই কোটা পুরোপুরি বাতিল করে দিতে পারে? সরকারের ইচ্ছা হলে সেই কোটা আবার ফিরিয়ে আনতে বা না–ও আনতে পারে? উচ্চ আদালত কি সরকারকে কোটা বাতিল কিংবা কোটা বলবৎ করার জন্য বলতে পারেন? কোটাসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কি উচ্চ আদালতে যেতে পারেন?


প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজে পাওয়ার জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাটি দেখে নেওয়া যাক—


 ২৯। (১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।


 (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী–পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।


 (৩) এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই—


 (ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে,


 (খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান-সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে,


 (গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেই রূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।


একটা রিপাবলিকে প্রত্যেক নাগরিক যেহেতু সমান, তাই অনুচ্ছেদ ২৯ (১) এবং ২৯ (২)–এ যৌক্তিকভাবেই ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে’ সবার সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে, যেখানে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ কিংবা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনো রকম বৈষম্য না করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রটি কেমন হবে, সে প্রসঙ্গে মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আগে সাম্যের (ইংরেজি পাঠে ‘ইকুয়ালিটি’) কথা বলেছিলাম।


তবে একটা রাষ্ট্র যদি মানবিক হয়ে উঠতে চায়, তাহলে তাকে শুধু সাম্য (ইকুয়ালিটি) নিশ্চিত করলেই চলবে না, নিশ্চিত করা উচিত ন্যায্যতাও (ইকুইটি)। যে মানুষটি জন্মসহ নানা কারণে পিছিয়ে পড়ে, সেই মানুষটির অনুকূলে রাষ্ট্রের কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ কিছু পেশার ক্ষেত্রে ধর্ম কিংবা কোনো লিঙ্গের অনুকূলে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সে কারণেই ২৯ (৩)–এ কিছু ব্যতিক্রম এর কথা বলা হয়েছে। আমাদের আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ হচ্ছে ২৯ (৩) (ক)।


এই অনুচ্ছেদে নাগরিকদের অনগ্রসর অংশকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিয়ে বিশেষ বিধান প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। তবে আমাদের খুব মন দিয়ে খেয়াল করতে হবে ২৯–এর ৩–এর শেষে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’ এই শব্দগুলো যদি আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় অনুচ্ছেদটির সঙ্গে মিলিয়ে পড়ি তাহলে সেটা দাঁড়ায় এ রকম—


 ২৯ (৩) (ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।


এর মানে হচ্ছে, সংবিধান বিশেষ বিধান প্রণয়ন করার ক্ষমতা দিয়েছে রাষ্ট্রকে কিন্তু এটা রাষ্ট্রের জন্য অবশ্য কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেনি। অর্থাৎ আমরা স্পষ্টভাবেই বলতে পারি, রাষ্ট্র কখনো যদি মনে করে সবচেয়ে অনগ্রসর মানুষগুলোর জন্যও ন্যূনতম কোনো কোটা থাকবে না, তাহলে সেটা কোনোভাবেই সংবিধান পরিপন্থী হবে না। আবার রাষ্ট্র যদি সত্যিকারের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষণ করে, সেটাকেও সংবিধান সমর্থন করে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও