বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ব্রাহমা গরু কেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ
গত কোরবানি ঈদে ঢাকার একটি খামারে কোটি টাকার ‘বংশমর্যাদাসম্পন্ন’ গরু বিক্রি নিয়ে বেশ আলোচনা তৈরি হয়। একই খামার থেকে বিক্রি হওয়া দামি একটি ছাগল নিয়ে যে কাণ্ড হলো, তা ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়। তবে এ লেখা মূলত উচ্চবংশীয় গরু নিয়ে।
গরুটি ছিল ব্রাহমা জাতের। বিশ্বজুড়ে এ জাতের গরু বেশ জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে সেটি আমদানি নিষিদ্ধ; কিন্তু ঢাকার সেই খামারে এ গরু কীভাবে এল তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নানা অনুসন্ধানী খবর আমরা পাচ্ছি।
নানা অনিয়মের অভিযোগে ইতিমধ্যে রাজধানীর সেই খামার উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে এই লেখার অবতারণা।
ব্রাহমা উন্নত জাতের মাংসল গরু। এটি যুক্তরাষ্ট্রের গরু হলেও এর আদিনিবাস ভারত উপমহাদেশে। তাই আমাদের এই উপমহাদেশের অন্যান্য গরুর মতো এর কুঁজ রয়েছে।
১৮৮৫ সালের দিকে মার্কিনরা ভারত উপমহাদেশের এই গরু আমদানি করে অন্যান্য ভালো জাতের গরুর সঙ্গে সংকরায়ণ করে ব্রাহমার এই জাত উদ্ভাবন করে। ১৯৩৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এই জাতের গরু প্রথম রপ্তানি করা হয়। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলসহ ৫০টির বেশি দেশে এ জাতের গরু লালনপালন করা হয়।
ব্রাহমা আকারে অনেক বড় জাতের গরু। ওজন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। জন্মের সময় একটি বাছুরের ওজন ১২০ থেকে ২০০ কেজি হয়ে থাকে। এগুলো উচ্চতায় ১২৮ থেকে ১৪৫ সেন্টিমিটার।
এ গরুর তিনটি রং সচরাচর দেখা যায়। এগুলো সোনালি বা ব্রোঞ্জ ও গাঢ় লাল রঙের হতে পারে; কিছু আবার সাদা থেকে হালকা বা গাঢ় ধূসর রঙের এবং কিছু গরু রুপালি রঙ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং ধীরে ধীরে তা গাঢ় কালো রঙে পরিণত হয়।
ব্রাহমা গরু কেন এত জনপ্রিয়? ব্রাহমা জাতের গরু আচরণে শান্ত প্রকৃতির। এগুলো লালনপালনও সহজ। এ জাতের গরু সাধারণ খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠে। এ গরুর গায়ের রং ও সৌন্দর্য সহজে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আকার বৃদ্ধির সঙ্গে মাংসের ওজনও বৃদ্ধি পায়। এ গরুর মাংসের গুণও তুলনামূলক ভালো।
ব্রাহমা গরু প্রতিবছর একটি করে বাচ্চা দেয়। এ গরু উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে সহজে বেড়ে ওঠে, যার জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া এ গরুর জন্য খুবই উপযোগী। এর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় সহজে কোনো রোগে সহজে আক্রান্ত হয় না।
৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় এ গরুর তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত এ জাতের গরু বাঁচে। এর মাথার শিংয়ের পাশের রং, গলার নিচে ঝুলে থাকা চামড়ার রং, কুঁজের রং ও আকার চোখে পড়ার মতো। এসব বৈশিষ্ট্যও এ জাতের গরুর জনপ্রিয়তার একটি কারণ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ব্রাহমা জাতের গরু