ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক : জনগণকেও আস্থায় নিতে হবে
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উপনীত হয়েছে বলে দুই দেশেরই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে দেশ শাসন করছে। এর আগে আর কোনো সরকার এত দীর্ঘ সময় দেশ চালানোর সুযোগ পায়নি। ভারতেরও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির সরকার তৃতীয় বারের মতো ভারত শাসনের অধিকার পেয়েছে। এর আগে জওহরলাল নেহরু ছাড়া তিন মেয়াদে আর কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে সব সময় সমান উষ্ণতা বজায় থেকেছে তা নয়। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের সরকার ক্ষমতায় থাকলে কিছু টানাপোড়েন ও জটিলতা থাকে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ভারতে যে দলের সরকারই থাক না কেন, বড় কোনো সমস্যা দেখা দেয় না।
কেউ কেউ মনে করেন, ভারতের প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের যতটা ইতিবাচক মনোভাব থাকে ভারতের কোনো সরকারই বাংলাদেশের প্রতি ততটা আন্তরিকতা দেখায় না। কথায় ও কাজে ভারত সব সময় এক থাকে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে অবশ্য ভারতবিরোধী শক্তি সব সময়ই সক্রিয় এবং এখানে ভারতবিরোধিতা ক্রমবর্ধমান। এর জন্য ভারতের মনোভাব ও কার্যক্রমই বেশি দায়ী বলে মনে করে হয়। বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কিছু নিতে ভারত যতটা আগ্রহী বাংলাদেশকে দেওয়ার প্রশ্নে ততটাই বিপরীত অবস্থান। তিস্তার পানি বণ্টনসহ আরও কিছু ইস্যুতে ভারতের অনুদারতা খুব স্পষ্ট।
তবে শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে দুই দেশকে পথ দেখাতে একটি অভিন্ন রূপকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ জুন এক শীর্ষ বৈঠকে এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই নেতার মধ্যে একান্তে ও প্রতিনিধি পর্যায়ে দুই দফায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুই দেশের মধ্যে সাতটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয়। নবায়ন করা হয় আরও তিনটি সমঝোতা স্মারক।
দুই দেশের মধ্যে রেলসংযোগ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। আর বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্র অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য দুই সরকার একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে ডিজিটাল পার্টনারশিপ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দুই দেশ সবুজ অংশীদারত্বের বিষয়ে।
এর বাইরে সমুদ্রবিজ্ঞানসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) ও ভারতের বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। আর যৌথ ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভারতের জাতীয় মহাকাশ প্রচার ও অনুমোদন কেন্দ্র ও ভারতের মহাকাশ বিভাগ একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক